জামালপুর প্রতিনিধি :
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসার শিক্ষা সফরের নামে শিক্ষক ছাত্রীদের নাচানাচি ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ায় চাঞ্চল্য সহ বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । এছাড়া নিন্দার ঝড় ওঠেছে সর্বত্র। মাদরাসার সুপার ইদ্রিস আলী, ৩ শিক্ষক, অফিস সহকারী বিল্লালকে বহিষ্কারের দাবী জানিছেন মাদরাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী এবং সচেতন মহল।
খোজ নিয়ে জানা যায়,চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসা ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাদরাসায় প্রতিনিয়ত না আসা,ঘুষ, দূর্ণীতি,ভুয়া বিল বাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন ইদ্রিস আলী। এদিকে মাদরাসার কতৃপক্ষ প্রশাসনকে অবগত না করে শিক্ষা সফরের নামে নৌকা ভ্রমণের আয়োজনে করে। সোমবার (২৮ আগস্ট) সাতপোয়া ইউনিয়নের জামিরা এলাকার পাচকাদা বিল থেকে গান গাইতে গাইতে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু ইকো পার্কের উদ্দেশ্য শিক্ষা সফর পালনের লক্ষ্যে নৌকা ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। আর এই নৌকা ভ্রমণ থেকেই বাদ্যযন্ত্র ও ডিজে গানের পাশাপাশি কয়েকজন শিক্ষক ও মাদরাসার ছাত্রীদের নাচানাচির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টিকটকে ছড়িয়ে পড়ে ।
ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গানের তালে তালে গণিত বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ঝুনঝুনি বাজাচ্ছে এবং ইংরেজী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান ,শরীর চর্চা শিক্ষক বিল্লাল হোসেন , অফিস সহকারী (কেরানী) জহুরুল ইসলাম উদ্দাম নাচে মত্ত আর এতে হাত তালি দিচ্ছেন ড্রেস পড়া মাদরাসার ছাত্রীরা ।
এ সময় মাদরাসার সুপার ইদ্রিস আলী ও ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সামনে বসেই নাচানাচি উপভোগ করছেন। বিষয়টি নিয়ে সরিষাবাড়ীর বিভিন্ন মহলের ফেসবুকেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ও শাস্তির দাবী জানান। জামালপুর জেলা প্রশাসক ও সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে মঙ্গলবার ( ২৯ আগস্ট) বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কতিপয় শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের বাদ্যযন্ত্র সহকারে অশালীন নৃত্য প্রশাসনের দৃষ্টি গোচর হলে চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসা সুপার ইদ্রিস আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক।
এরপরদিন ৩০ আগস্ট সকালে দীর্ঘ ২ ঘন্টা ম্যানেজিং কমিটি ও মাদরাসার সুপার এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা আলোচনায় বসেন এবং সেই সভা থেকেই দুপুর ১ টায় গণিত বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, ইংরেজী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান ,শরীর চর্চা শিক্ষক বিল্লাল হোসেন , অফিস সহকারী (কেরানী) জহুরুল ইসলামকে শোকজ করেন। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে সুপার ও শিক্ষকরা । এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা এমন কান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিকার চেয়ে মাদরাসা অধিদপ্তরের নিকট সুপার সহ তাদের বহিষ্কারের দাবী জানিয়েছেন।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালাম ফকির অভিযোগ করে জানান, সুপার ইদ্রিস আলীর নির্দেশে মাদরাসার জাহাঙ্গীর মাষ্টার বলেছে পিকনিকে না গেলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিবে না এবং ফরম পুরন করতে দিবে না। আমি আমার মেয়েকে যেতে দেয়নি।
জামিরা বাজারের সুলতান বলেন, মাদরাসার শিক্ষক হয়ে নাচানাচি করা উচিৎ হয়নি। এর বিচার হওয়া উচিৎ। সুপার সহ শিক্ষকদের বহিষ্কারের দাবী জানাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একবশিক্ষার্থী জানান, পিকনিকে না গেলে পাঠদান নিবে না ও ফরম পুরণ করতে দিবে না৷ তাই ভয়ে গিয়েছিলাম। আমি নাচানাচি করিনি। মাদরাসার ছাত্রী হয়ে বোরকা কেন পড়েন না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,ড্রেস পড়েই মাদরাসায় যেতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে সুপার ইদ্রিস আলী মুঠোফোনে শনিবার দুপুরে জানান, শোকজ পেয়ে জবাব দিয়েছি। ৩ শিক্ষক ও ১জন কেরানীকে শোকজ করেছি । তারা জবাব দিয়েছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারকে মুঠোফোনে কল দিলে ব্যস্ত থাকায় কেটে দেওয়ায় ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি৷
এ দিকে জামালপুর জেলা প্রশাসক মো: ইমরান আহমেদ মুঠোফোনে জানান , মাদরাসার শিক্ষক এবং ছাত্রীদের কিছু অশ্লীল কার্যক্রমের ভিডিও আমার কাছে এসে পৌছেছে । মাদরাসার সুপারকে শোকজের পর জবাব সহ সকল কিছু সংযুক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি । এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ জাকির হোসাইন জানান, বিষয়টি আমার নজরে আছে। নাচানাচি করেছে লঞ্চে পরবর্তীতে শিক্ষা অফিসার সুপারকে শোকজ করেছে এবং সুপার জবাব দিয়েছে ও শিক্ষকদের শোকজ করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করেছে তারা কি বলেছে দেখি, তারপর ব্যবস্থা নিব।
সময় জার্নাল/এলআর