জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি:
গোধুলী শেষে সন্ধ্যা নামার প্রস্তুতি চলছে। চারিদিকে শুভ্র কুয়াশার আবরণ। সঙ্গে শীতের হিমেল হাওয়া। খোলা আকাশের নিচে সারি সারি মাটির চুলা সাঁজানো। এতে দাউ দাউ করে জ্বলছে কাঠের টুকরো। সেসব চুলার ওপর হাঁড়ি বসানো। ঠিক মুখোমুখি কিছু জওয়ান-বৃদ্ধ মহিলা। কারো সঙ্গে বাচ্চা, বোন ও প্রতিবেশী।
আর চারপাশটায় সবুজ ঘাসের ওপর রঙিন পাটি বিছানো। পিঁড়ি সদৃশ কিছু টুলও রয়েছে। তড়িঘড়ি করে চলছে পিঠা তৈরির কাজ। ঠিক এভাবেই জমে ওঠছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্র (টিএসসিসি) চত্বর।
কৃষকের ঘরে এখনো নবান্নের সোনালী ধান না উঠলেও পিঠা উৎসবে মেতেছে শিক্ষার্থীরা। বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা খেতে খেতে আড্ডা-গানে বেশ সরগরম এই চত্বরটি। সন্ধ্যার পর লেগে আছে ভীড় ও হৈ-হুল্লোড়। চলছে হরেক রকমের পিঠা বিক্রির ধুম। আর এই উৎসবের অংশীদার হতে ছুটে আসছেন অসংখ্য তরুণ-তরুণী। দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরাই এখানকার বেশিরভাগ ক্রেতা।
মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বাঙালিদের কাছে পিঠা বেশ সমাদৃত। কুয়াশায় মোড়ানো শীতের হিমেল হাওয়ায় ধোঁয়া উঠা গরম গরম ভাঁপা, চিতই, পাটিসাপটা, পুলি ও বিভিন্ন ধরনের তেলের পিঠার স্বাদ না নিলেই নয়। আর সেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে চলে শীতকালীন পিঠা ও পায়েস তৈরি ধুম। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় এবং মজবুত করে তুলে এই পিঠা-পুলির উৎসব।
ক্যাম্পাসের টিএসসিসি ও পশ্চিমপাড়ার বটতলায় প্রতিনিয়ত ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় মহিলারা। নানা রকম পিঠার সঙ্গে রয়েছে সাত ধরনের ভর্তা। যেমন; বেগুনের ভর্তা, শুটকি ভর্তা, সরিষা, ধনিয়া পাতা, কালোজিরা ও কাঁচা মরিচের ভর্তা। এসব প্লেট ও বাটিতে সাঁজিয়ে ক্রেতাদের পরিবেশন করছেন তারা। প্রতি পিস চিতই ও ভাঁপা পিঠা ১০টাকা, পুলি পিঠা ৫ টাকা, বিভিন্ন ধরনের তেলের পিঠা ১৫ টাকা ও পাঠি সাপটা ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সঙ্গে সাত রকমের ভর্তার বিনিময়ে নিচ্ছেন আরও পাঁচ টাকা।
পিঠা খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এনামুল হক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মনে হয়েছিল হয়তো শীতের পিঠা খাওয়া হবেনা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসিতে এসে চিতই আর ভাঁপা পিঠা দেখে আমার মন ভরে গিয়েছে। তাই বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে পিঠা খেতে চলে আসলাম। আর হুট করেই চুলার ধারে বসে মায়ের হাতে বানানো পিঠা খাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল।
শীতের এই পিঠার আমেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেঘলা আক্তার বলেন, রাজশাহীতে ধীরে ধীরে শীত পড়তে শুরু করেছে। এই ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ক্যাম্পাসে পিঠা বিক্রি করছেন স্থানীয় কিছু লোকজন। প্রতি বছরই তারা এখানে বসে পিঠা তৈরি করেন। আমরা প্রায়ই এখানে খেতে আসি। নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকলেও এখানে শীতকালীন পিঠার স্বাদ মেটানো যায়। তাই কুয়াশায় মোড়ানো এই শীতে উষ্ণ কাপড় জড়িয়ে পিঠা খাচ্ছি।
নগরীর মেহেরচণ্ডী এলাকা থেকে ক্যাম্পাসে পিঠা বিক্রি করতে এসেছেন জসিম মিয়া। তিনি বলেন,প্রতিবছর শীতকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পিঠা বিক্রি করতে আসি। আমার পরিবারের আয়ের একটা মাধ্যম পিঠা বিক্রি করা।আমরা ৪ জন একসাথে পিঠা তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকি। ছোট ছেলেটা সবার মাঝে পিঠা পরিবেশন করে এবং একমাত্র নাতনীটা আমাদের ব্যস্তময় সময়ে তার ছোটাছুটির মাধ্যমে আমাদেরকে আনন্দ দেয়।
সময় জার্নাল/এলআর