বুধবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, বাকৃবি প্রতিনিধি:
‘আইপিসিসির তথ্যানুসারে, গত দশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা ২০৪০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে ঝড়, বন্যা, খড়া, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূযোর্গের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ যেখানে মাত্র ৮৮লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে ফসল চাষ করে ১৭ কোটির বেশি মানুষের খাদ্যের যোগান দিতে হচ্ছ। প্রতিনিয়তই আবাদি জমির পরিমাণ কমার কারণে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিতে উৎপাদনের ঝঁুকি আরও বাড়ছে। এসমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের জলবায়ু স্মার্ট কৃষির দিকে ধাবিত হতে হবে। এজন্য নতুন টেকসই ফসলের জাত, টেকসই কৃষি প্রযুক্তি এবং কৃষি-আবহাওয়ার সুফলকে কাজে লাগাতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে। সরকার দক্ষ জনবল তৈরি করে কৃষি-আবহাওয়ার সুফলকে কাজে লাগাতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি-আবহাওয়ার উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু করেছে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অনুষ্ঠিত ‘সমসাময়িক কৃষি-আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শাহ কামাল খান।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এগ্রোমেটিওরোলজিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় সম্মেলনটি আয়োজন করেন বাকৃবির এগ্রোমেটিওরোলজি বিভাগ ।
সম্মেলনে এগ্রোমেটিওরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. আরিফ খান রবিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রব্বানী এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শাহ কামাল খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়টি খাদ্য-শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি মাৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সাথেও সম্পৃক্ত। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়টি আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারছি। আগে আকস্মিক শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতির সাধন হতো। রিয়েল টাইম আবহাওয়া ফরকাস্টিংয়ের জন্য এই ঝঁুকি মোকাবেলা করা অনেকাংশেই সম্ভব হয়েছে। কৃষি-আবহাওয়ার তথ্য এলাকাভিত্তিক দেওয়া সম্ভব হলে ফসল উৎপাদনে ঝুঁকি অনেকাংশেই মোকাবেলা করা সম্ভব হবে, এতে কৃষক উপকৃত হবে। দেশের কৃষককে স্মার্ট কৃষির সাথে খাপ খাওয়াতে আমাদের গ্রাজুয়েটদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের গ্রাজুয়েটদের সেভাবেই গড়ে তুলতে কাজ করা হচ্ছে।
দিনব্যাপী ওই সম্মেলনে কৃষিতে জলবাযু পরিবর্তনের প্রভাব সংশ্লিষ্ট চারটি গবেষণা পেপার উপস্থাপন করা হয় এবং তার উপর মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গবেষণা পেপার উপস্থাপন করেন বাকৃবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল বাতেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ ড. মো. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ কামারুজ্জামান মিলন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসান মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এমআই