মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক পারভেজের 'নাইন আই মডেল'

সোমবার, জানুয়ারী ৮, ২০২৪
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক পারভেজের 'নাইন আই মডেল'

প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ:

প্রফেসর পারভেজের সুশাসন ভাবনায় 'নাইন আই মডেল" এক অসাধারন আবিষ্কার। এবিষয়ে তার ভাবনা ও "নাইন আই মডেল" সম্পর্কে গবেষণা থেকে আমরা সরাসরি জানতে পারি। বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি দেশের জন্যই সুশাসন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এই মডেলে তিনি দেখিয়েছেন আমরা সুশাসনের নয়টি বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব দিতে পারি-যেগুলো দ্বারা নির্ণয় করা সম্ভব যে, ঐ রাষ্ট্র সুশাসনের উপযুক্ত কিনা। 

প্রফেসর পারভেজের "নাইন আই মডেল" 

(১) Independent and Non-partisan Election Commission, স্বাধীন ও দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। 
(২) Independent Judiciary and the Rule of Law, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসন। 
(৩) Independent Media and Freedom of Speech, স্বাধীন প্রচার মাধ্যম ও বাক্ স্বাধীনতা। 
(8) Independent Anti-corruption Commission, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। 
(৫) Investing in the people. জনগণের মধ্যে বিনিয়োগ। 
(৬) Independent and Effective Parliament. স্বাধীন ও কার্যকর সংসদ। 
(৭) Independent Human Rights Commission. স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন। 
৮) Independent Ombudsman System. স্বাধীন ন্যায়পাল ব্যবস্থা। 
৯) Investment Friendly Environment বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ। 
এই নয়টি দফার প্রত্যেকটির শুরুতে রয়েছে ইংরেজি অক্ষর 'আই'। তাই আমি এটাকে "সুশাসনের জন্য নাইন আই মডেল' বা 'সুশাসনের জন্য নয়টি ১৮' এভাবেই উল্লেখ করতে চাই। সমাজকে গণতান্ত্রিকীকরণের জন্য সুশাসনের এই নয়টি উপাদানকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অবশ্যই সুপ্রতিষ্ঠিত করয়ে হবে। এই নয়টি 'আই' এর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ সহ যেকোন দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সুদূর পরাহত। এই উপাদানগুলো আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরিএবং মুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা ও দেশী-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যা প্রবাসী বাংলাদেশীদের (এনআরবি) বিনিয়োগ সম্ভাবনা এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটা সত্য যে, কেবলমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্রে যাওয়া যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্র সম্পর্কে ২০০-৩০০ পৃষ্ঠার হোমওয়ার্ক (মেনিফেস্টো) থাকা উচিত, যেখানে তারা ভোটের বিনিময়ে জনগণকে যে গণতন্ত্র দিতে চায় সে সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনাগুলো তুলে ধরবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ভোট পেয়ে ক্ষমতায় যায় তাহলে সমানাধিকারের নিশ্চয়তা বিধানকারী একটি গণতান্ত্রিক সমাজ, আইনের শাসন, সম্পদের সুষম বণ্টন, সামাজিক ন্যায়বিচার, বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় তাদের নীতিগুলো কখন ও কিভাবে প্রয়োগ করবে সে ব্যপারে তাদের সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ বক্তব্য থাকা উচিত। তারা যদি তাদের রাজনৈতিক দর্শন ও অঙ্গীকারগুলো দলের মেনিফেস্টো আকারে প্রকাশ করে তাহলে নির্বাচনে ভোট দিতে যাবার আগেই ভোটাররা জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বাংলাদেশে দুঃখজনকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মেনিফেস্টো প্রকাশের বিষয়টি স্বচ্ছ নয়। একই কথা প্রযোজ্য তাদের অঙ্গীকারের বেলায়ও। অঙ্গীকার করার বেলায় অস্বচ্ছতা কাজ করে, যার দরুণ তারা নির্বাচনের পর অঙ্গীকার থেকে সরে যাবার অবকাশ পায়। সুষ্ঠু রাজনীতি ও তার বাস্তবায়ন দেশের উন্নয়নের অপরিহার্য পূর্বশর্ত। সুশাসন বললে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, এতে ন্যায়ানুগ শাসন, জনগণের মধ্যে বিনিয়োগ এবং বেসরকারি অর্থনৈতিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দেশ এসব গুণাবলী অর্জন করছে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হলে অবশ্যই সাফল্যের কিছু সুনির্দিষ্ট মাপকাঠির সাহায্য দিতে হবে।

একটি চূড়ান্ত মাপকাঠির সাহায্যে আমরা প্রমাণ করতে পরি যে, আমাদের দেশে সু (ভাল) ও ন্যায়ানুগ শাসন চলছে কিনা। সুশাসনের নীতিমালা এবং তার বাস্তবায়নে সুশীল সমাজের যে উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন তা এখনো বাংলাদেশে জনগণের সামনে আসেনি। আমাদের সংসদ, বিচারব্যবস্থা, রাষ্ট্রের নির্বাহী শাখা সহ সুশীল সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে মানবীয় মর্যাদা ও স্বাধীনতা বিকশিত হবার মত নীতিমালা এবং শাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব। সুশাসনের কিছু নীতিমালা পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রীসে। আর কিছু নীতিমালা খুব সম্প্রতি গড়ে উঠেছে, কিছু আমাদের ইতিহাস থেকে আমরা শিখেছি এবং কিছু অন্য গণতান্ত্রিক সমাজ থেকে পেয়েছি। 

ব্যপকার্থে বলতে গেলে, সুশাসন মৌলিক এবং সার্বজনীন মানবাধিকার এর কথা তুলে ধরে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী জনগণই রাজনৈতিক ক্ষমতার মালিক (অনুচ্ছেদ ৭)। সুশাসনের নীতিমালা জনগণকে একটি ন্যায়ানুগ সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজে জীবন যাপন করার সুযোগ করে দেয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তাতে অংশ নেয়ার জন্য জনগণকে শিক্ষিত করে তুলতে বাংলাদেশের মত দেশগুলোর কিছু উপায় উপকরণ থাকা দরকার। আমাদের দুর্নীতি দমনে এবং মানবাধিকার সহ সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি অব্যাহত সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। আমার মতে, একটি জাতির রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গণতান্ত্রিক হওয়াই সুশাসনের সবচেয়ে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি। আমেরিকার অন্যতম মহান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ভাষায়, গণতন্ত্র হচ্ছে এমন এক ধরনের সরকার যা "জনগণকে নিয়ে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য"। এর অর্থ হচ্ছে, গণতান্ত্রিক সরকার প্রদত্ত অধিকার ও নীতিগুলো বিশ্বের যেকোন স্থানে বাস্তবায়ন করা যায় এবং করা উচিত। এটা কেবল আমেরিকার জন্যই প্রযোজ্য-তা নয়। অপ-শাসন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এবং "দলের দ্বারা। সরকার, রাজনীতিকদের জন্য সরকার এবং জনগণের জন্য কিছুই নয়, এমন সরকার" যাতে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক লোকের তার সরকার সম্পর্কে অবাধে কথা বলার অধিকার থাকা প্রয়োজন, যা একটি মৌলিক মানবাধিকার। প্রকৃত নাগরিকের তার সরকার সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করার অধিকারকে "শাসিতের দ্বারা শাসন" তত্ত্বে সমর্থন দেয়া হয়েছে এবং এটা বিশ্বের জাতিগুলো স্বীকৃতিও দিয়েছে। বই: এক পলকে একটু দেখা, অধ্যাপক পারভেজের জীবন ও দর্শন, অনুচ্ছেদ-৭.১।

লেখক: অর্থনীতিবিদ ও চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনোমিকস রিসার্চ (এনবিইআর)। 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল