নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবীবুল আউয়াল বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করার আগে বিভিন্ন রকম ধারণা ছিল, পক্ষে বিপক্ষে ক্যাম্পেইন ছিল। এ নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনারা নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা নির্বাচন বর্জন করে জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করেছে ভোটাধিকার প্রয়োগ না করতে। এ বিষয়টিও আমাদের বিবেচ্য ছিল। তবে আমরা খুশি হতাম তারা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহন করতো। তাহলে নির্বাচনের সার্বজনীনতা আরও বিস্তৃত এবং আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি হয়নি।’
সোমবার বিকেল তিনটার দিকে নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সংবাদ সম্মলনের ইসির সব কমিশনার ও সচিব উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনের সারাদেশে তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের কয়েকদিন আগে নওগা-২ আসনে একজন প্রার্থীর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। এ ছাড়া আরেকটি আসনে ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। কারণ, সেখানে একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছিল। সে কেন্দ্রে আবার ভোটগ্রহণ করার পর বাকি কেন্দ্রের সঙ্গে মিলিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’
এ সময় কাজী হাবীবুল আউয়াল ২৯৮টি সংসদীয় আসনের কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফল পর্যলোচনা করে বলেন, ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়লাভ করেছে, জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকে ১১টি আসনে, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নৌকা প্রতীক নিয়ে ১টি আসনে, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি হাতঘরি প্রতীক নিয়ে ১টি আসনে এবং স্বতন্ত্র পার্টি ৬১টি আসনে জয়লাভ করেছে। এই ২৯৮টি আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৯৬০ জন। প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ছিল ৪১ দশমিক ৮। মোট ভোটার ছিলেন ১১ কোটি ৯৫ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ জন। এর মধ্যে ভোট প্রদান করেন ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪১২ জন।
ভোটগ্রহণের দিনে অনিয়মের অভিযোগে ১৪৮- ময়মনসিংহ- ৩ আসনের ১টি কেন্দ্রের ভোট গণনা স্থগিত করা হয়েছিল। এ কেন্দ্রের মোট ৩ হাজার ৩২টি। এ আসনের অন্যান্য ভোটকেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী সর্ব্বোচ্চ প্রাপ্ত ৫৩ হাজার ১৯৬টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৫২ হাজার ২১১টি। ভোটের ব্যবধান ৯৮৫। এ ব্যবধান কম হওয়ার কারণে ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি শনিবার স্থগিত হওয়া কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হবে।
সিইসি বলেন, নির্বাচন প্রত্যেক্ষ করার জন্য দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ছিলেন। তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাদের পর্যবেক্ষণের মন্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। আজ সকালে জাপানের পর্যবেক্ষণ দল ও রাষ্ট্রদূত আমাদের সঙ্গে দেখা করে গেছেন। তারা নির্বাচনের সার্বিক প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেছেন, সন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি বলব- তারা ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। তাদের দলনেতা বলেছেন তিনি পৃথিবীর অনেক দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এর মধ্যে আমাদের নির্বাচন তার কাছে সর্বোত্তম মনে হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে হাবীবুল আউয়াল বলেন, ‘ভোট গণনা হয়ে যাওয়ার পরে ভোটগ্রহণের প্রকৃত হারটা পাওয়া যায়। সর্বশেষ ভোটগ্রহনের চূড়ান্ত হার ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। রোববার বেলা ১২টা, দুপুর ২টা ও ৩টায় প্রকৃত হার বেরিয়ে আসে না। এতে যদি কারোর আপত্তি থাকে, তাহলে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।’
এ সময় বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগগুলো আমরা গ্রহণ করেছি। আপনারা জানেন, রিটার্নিং অফিসার যেটা ঘোষণা করেন সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে ইসির নিয়ম হচ্ছে, গুরুতর অভিযোগ থাকলে কমিশন সেটা পুনরায় বিবেচনা করে থাকে। এ ছাড়া কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে মনে করে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বা ফলাফল প্রকাশে প্রভাবিত হয়ে গেছে তাহলে অভিযোগকারীরা চাইলে গেজেট প্রকাশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নালিশ জানাতে পারবেন সাহায্য নিতে পারেন। সেখানে বিচারের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।’
এ সময় সিইসি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুইজন পোলিং অফিসার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন।
আরইউ