সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নেকাব খুলতে না চাওয়ায় এক শিক্ষার্থীর বিভাগীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) না নেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
রবিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় মানববন্ধনে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি তোলেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা। এবং মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর চার দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপিও জমা দেন তারা।
মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি মুহাম্মাদ আল আমিন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মুহাম্মদ নাঈম উদ্দিন। এছাড়া সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রাহাত, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-ইমরান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাব্বির, দাওয়াহ সম্পাদক আনওয়ার ইসলাম, তথ্য, গবেষণা ও প্রচার সম্পাদক আবু সাঈদ, প্রকাশনা দফতর সম্পাদক নেয়ামাতুল্লাহ আল ফারিস, অর্থ ও কল্যাণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক আবু হুরায়রা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তাকবির ও কার্যনির্বাহী সদস্য আমানুল্লাহসহ সংগঠনটির অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ইস্যু নিয়ে মানববন্ধন করতে হচ্ছে আমাদের, বিষয়টি লজ্জাজনক। নিকাব না খোলায় ভাইভা থেকে বের করে দেওয়ার মাধ্যমে সংবিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতার বিধানকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও নাগরিক অধিকার হরণ করার নামান্তর। এটি নারীশিক্ষা বিরোধী। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছি। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখবেন।’
এদিকে মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বরাবর চার দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘নেকাব না খোলায় বিভাগীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও নাগরিক অধিকার হরণ করার নামান্তর। পর্দা মুসলিম নারীর রক্ষাকবচ ও আত্মপরিচয়ের হাতিয়ার। কিন্তু স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এবং একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে শিক্ষদের এমন নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের চরমভাবে আঘাত করেছে। আমরা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত তাদের দাবিগুলো হলো- ক্যাম্পাসে পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ধর্মীয় ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নিকাব হিজাবের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এক ছাত্রী নেকাব পরে অংশ নেয়। এসময় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য তাকে নেকাব খুলতে বলেন। এসময় ওই ছাত্রী নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ভাইভা বোর্ডে একজন নারী শিক্ষিকা থাকলেও তার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতের বিষয়ে উপস্থিত শিক্ষকরা অসম্মতি জানান এবং তাকে ভাইভা বোর্ডের সকল সদস্যদের সামনে নেকাব খুলতে বলেন। পরে নেকাব না খোলায় ওই ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ভাইভা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
সময় জার্নাল/এলআর