বুধবার, জানুয়ারী ২৪, ২০২৪
রাবি প্রতিনিধি
শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমেদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা শীর্ষক আলোচনা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বুধবার ( ২৪ জানুয়ারী) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরন্জন সমাদ্দার ছাত্র - শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পরিষদ কতৃক আয়োজিত হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে ছিলেন, অর্থনীতিবিদ ও প্রাবন্ধিক সনৎ কুমার সাহা এবং দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম। মূল প্রবন্ধ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহিন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমকাল পত্রিকার লেখক ও প্লানিং এডিটর ফারুক ওয়াসিফ
অর্থনীতিবিদ ও প্রাবন্ধিক সনৎ কুমার সাহা বলেন,আবুল মনসুর আহমেদের ব্যাপারে আমার কৌতুহল আছে। তার লিখা পড়ার মাধ্যমে আমি সাংবাদিকতার অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আবুল মনসুর আহমেদ তার লেখায় নিজের সত্তাকে বজায় রেখেছেন। আবুল মনসুর আহমেদকে পড়ার মাধ্যমে আমরা বিস্তর বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। সাংবাদিকরা নিদিষ্ট কোন মতকে চাইলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আমরা চাই সাংবাদিকরা যেন নীতিনৈতিকতার মাধ্যমে তাদের কাজ করে যায়।
দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, আবুল মনসুর আহমেদ বাঙালি মুসলমানদের জন্য সবসময় চিন্তা করতেন। আবুল মনসুর আহমেদ আদর্শিক জীবন যাপন করে গেছেন। শৈশবকাল থেকে আত্মসম্মানবোধের অধিকারী ছিলেন। আবুল মনসুর আহমেদ ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব। বৃটিশ আমলে তিনি একে ফজলুল হক এবং সোহরাওয়ার্দীর সাথে রাজনীতি করেছেন। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ে তার অবদান অনস্বীকার্য। আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইয়ে তিনি রাজনীতির নানা বিষয়ে তুলে ধরেন।
সাংবাদিকতার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, যারা সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই তাদেরকে সুচিন্তিত মানসিকতার লোক হয়ে নিজের মতামত উপস্থাপন করতে হবে। নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নৈতিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। অন্যজনকে হেয় প্রতিপন্ন করে কোন মন্তব্য করা যাবে না। নিজে দায়িত্বশীল থেকে মত প্রকাশের মাধ্যমে অধিকার আদায়ে কাজ করতে হবে। বর্তমান সময়ে তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে একটা গণতন্ত্রায়ন হয়েছে। সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন মত প্রকাশ করতে গিয়ে মিথ্যা কোন তথ্যকে প্রধান্য না দিয়। তথ্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে তথ্যকে সর্বোচ্চ যাচাই করে তারপর প্রকাশ করব। মুক্তচিন্তার অধিকারী হয়ে কাজ করতে হবে। ভিন্নমতের সাথে তথ্যবহুল আলোচনার মাধ্যমে সঠিক তথ্য পৌছানোর চেষ্ঠা করতে হবে।
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যে করে বলেন, আগামীর পৃথিবী হচ্ছে দক্ষতার পৃথিবী। তোমরা যারা শিক্ষার্থী তোমাদের দক্ষতাসম্পূর্ণ হতে হবে। দক্ষতা অর্জন করার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে পৃথিবীর নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
সাংবাদিক এবং গবেষক ড. কাজল রশিদ শাহিন বলেন,বাংলাদেশের নবজাগরণের দার্শনিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন আবুল মনসুর আহমেদ। সাংবাদিকতা - সম্পাদকতা ও বহুমাত্রিক লেখালেখির মধ্য দিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক অংশগ্রহন নিশ্চিত করে বৌদ্ধিক পরিমন্ডলে রেখে গেছেন সক্রিয় এবং দিক নির্দেশক ভূমিকা। সাংবাদিকদের মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রশ্ন করার ক্ষমতা। আমরা আবুল মনসুর আহমেদের শৈশবে দেখতে পাই সমাজ সংস্কারের নানাবিধ প্রশ্ন করার মাধ্যমে সে খ্যাতিমান একজন সংবাদিকে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি সবসময় সমতায় বিশ্বাস করতেন। ১৯২৩ সালে ছোলতান পত্রিকায় কাজ করার মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন। উনাকে পাঠ এবং সাংবাদিকতা - সম্পাদকতার বর্ণাঢ্য অধ্যূয় সম্পর্কে সবিস্তারে জানা বর্তমান ও উত্তর-প্রজন্মের জন্য কেবল আবশ্যক নয়,অবিকল্পও বটে।
এসময় তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালে এসে আমরা যদি আবুল মনসুর আহমেদের সাংবাদিকতা জীবনের শতবর্ষে চোখ রাখি,তাহলে এই প্রজন্মের একজন সাংবাদিক হিসেবে কেবল বিস্নয় উদ্রেক করে না, ভক্তি ও শ্রদ্ধাও জাগ্রত হয়। উনি বিদ্যায়তনিক প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক ছিলেন না। সাংবাদিকতার তত্ত্ব ও ব্যবহারিক দিক নিয়ে বই লেখিয়ে তাত্ত্বিক গবেষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন পেশাদার সাংবাদিক এবং সম্পাদক।
সমকাল পত্রিকার লেখক ও প্লানিং এডিটর ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আবুল মনসুর আহমেদের উত্থানের মাধ্যমে মফস্বলের উত্থান হলো। আবুল মনসুর আহমেদের সময়ে নানা বৈষম্য ছিল। তিনি সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন। তিনি সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। সে সময় মুসলমানরা নানদিক থেকে পিছিয়ে ছিল, তিনি মুসলমানদের অধিকার আদায়ে কাজ করে গেছে। তিনি ধর্মের ভিত্তিতে না বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য কাজ করেছেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বকুলের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক ইমরান মাহফুজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক তানভীর আহমেদ। এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক - শিক্ষার্থীসহ মোট দুই শতাধিক ছাত্র -ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন।
আরইউ