সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
নিয়োগ বোর্ডে অশোভন আচরণের অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসানকে প্রভাষক পদে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬২তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের। শাস্তি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো ধাপ পূরণ না করেই উপাচার্য স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তারা।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আনিছুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন, সদস্য অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীনসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দরা বলেন, নিয়োগ বোর্ডে মতের অমিলের কারণে যে প্রক্রিয়ায় পদ অবনমন করা হয়েছে, এটা নিয়মতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য নয়। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে মতভিন্নতা থাকতেই পারে। মতভিন্নতাকে কি অসৌজন্যমূলক আচরণ বলা হবে? নিয়োগ বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যের স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের আইনগত অধিকার থাকা সত্ত্বেও সেটিকে অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভবিষ্যতে বিভাগের সভাপতিদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করা দূরুহ হয়ে পড়বে। তাছাড়া বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকলেও মাননীয় উপাচার্য তাঁর আস্থাভাজন একটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের মাধ্যমে কোন আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়াই ড. বখতিয়ার হাসানকে পদ অবনমন করেন।
নেতৃবৃন্দরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মিসকন্ডাক্ট আইনে কয়েকটা ধারা থাকে। তদন্তে অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে যে ধরনের আচরণ হয়েছে সেজন্য তাকে কোন ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে তা নির্ধারণে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তারপর আবার কেন শাস্তি দেওয়া হবে না তার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। কিন্তু এসকল ধাপ বাদ দিয়েই শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা নিয়মবহির্ভূত। এখানে আইনের সঠিক প্রয়োগ হয়নি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করতে হলে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের অনুমোদন লাগবে, এক্ষেত্রে সেটাও হয়নি।
তারা আরও বলেন, উপাচার্য এধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের তদন্ত কার্যক্রমকে ভিন্নখাতে চালানোর চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে সামনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করছেন। স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলছে।
এর আগে গত রবিবারও ড. বখতিয়ার হোসেনের পদ অবনমনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয় শাপলা ফোরাম। ওইদিন দুপুরে একই দাবিতে নঁওগা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে। সর্বশেষ সোমবার তীব্র নিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশটি বিভাগের সভাপতিদের সাক্ষর সম্বলিত একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এবং মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয় শাপলা ফোরাম।
এমআই