জেলা প্রতিনিধি:
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গেল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এরমধ্যে ফেনীতে পানি নেমে গেলেও নোয়াখালীতে এখনো কাটেনি বন্যার রেশ। গত ১০ দিন ধরে পানিবন্দি নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।
ফলে সেখানকার বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বন্যা-পরবর্তী খাদ্য সংকটের পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব বেড়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের। তাদের ঘরগুলোও এখনো বসবাস অনুপযোগী। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ৯ নম্বর দেউটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ আর অসহায়তার চিত্র। সেখানকার অধিকাংশ রাস্তাঘাটে এখনো হাঁটুসমান পানি। কোথাওবা তার একটু নিচে।
ইউনিয়নের নবগ্রামের ব্যাপারী বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সাতটি পরিবারই পানিবন্দি। সবার রান্নাঘরে পানি এখনো থৈ থৈ করছে। বসতঘর থেকে পানি নেমে গেলেও কাদামাটির মধ্যেই বসবাস করছেন সাতটি পরিবারের প্রায় ৪০ জন সদস্য। কোনো ঘরেই নেই মাটির চুলায় রান্নার ব্যবস্থা। শিশু, বৃদ্ধ আর অসুস্থ মানুষদের নিয়ে এই পরিবারগুলো পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছে।
আরেক বাসিন্দা মো. হারুন বলেন, আমার রান্নাঘর ডুবে চুলা ভেঙে গেছে। পানি ওঠার তিনদিন পর টয়লেটও ভেঙে গেছে। এমন দুর্দশায় কোনোদিন পড়িনি। পিচ্ছিল কাদামাটি, আর খাটের ওপর আরেকটা চৌকি দিয়ে রাতে কোনোরকম ঘুমাই। পুরো ঘরে কাদামাটি জমে থাকায় ইট-কাঠ বিছিন্ন কোনোরকম চলাচল করতে হচ্ছে। এভাবে আজ ১৫ দিন পানিবন্দি। আমরা যেভাবে আছি, এভাবে মানুষ বসবাস করতে পারে না।
আমরা কিছু খাল পরিষ্কার করেছি। পানি ধীরে ধীরে নামছে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে, তাতে পানি বেড়ে যাচ্ছে। তবে সব জায়গায় এখনো আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। পানি নেমে গেলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।- জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর
শুধু সোনাইমুড়ী নয়, বন্যায় একই পরিস্থিতি জেলার চাটখিল ও সেনবাগ উপজেলায়ও। পানি না নামায় গত কয়েকদিনের দুর্ভোগে নাকাল বানভাসিদের জীবন। চাটখিল উপজেলার রাজারামঘোষ গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, কবে ভালো করে রান্না করেছি জানি না।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, ফেনীতে পানি দ্রুত এসে দ্রুত নেমে গেছে। নোয়াখালীতে পানি এসেছে ধীরে, ধীরে। এখন যাচ্ছেও ধীরে। একটা ইউনিয়নে পানিবন্দি প্রায় হাজার পরিবার থাকলেও পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা নেই।
সোনাইমুড়ী উপজেলায় ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী আশরাফুল আমিন বলেন, মানুষ দু-তিনদিন পানিবন্দি থাকলে শুকনো খাবার বা আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে সহায়তা করা যায়। কিন্তু দিনের পর দিন সহযোগিতা করা কঠিন। এখনো বন্যার পানি নামছে না। অনেকের বসতঘরে এখনো পানি, রান্নার চুলাও জ্বলছে না। কেউ কেউ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা কিছু খাল পরিষ্কার করেছি। পানি ধীরে ধীরে নামছে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে, তাতে পানি বেড়ে যাচ্ছে। তবে সব জায়গায় এখনো আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। পানি নেমে গেলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সময় জার্নাল/এলআর