জবি সংবাদদাতা:
শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবির প্রতিবাদ ও সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলেজের অডিটোরিয়ামের সামনে এ বিক্ষোভ করেন তারা।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম করে আমাদের কলেজের দশজন শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেছেন। যে বিষয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা, ক্লাস ক্যপ্টেনরাও অবগত নই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতিও যেন সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিক্ষোভে কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী চিত্রামনি বলেন, শিক্ষকদের পদত্যাগের তালিকা কিভাবে করা হয়েছে তা আমরা জানিনা। যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক। কিন্ত এরকমভাবে শিক্ষকদের হেনস্তা করা কাম্য নয়। আমাদের কলেজ সিটি করপোরেশনের কলেজ। এটা পরিচালনার কার্যক্রমও তাদের কাছে থাকা উচিত।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা বলেন, আমাদের কলেজের সভাপতি হন মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মনোনীত কেউ। তারা যাকে বলবে আমরা তাকে মেনে নেবো। কিন্ত নতুন সভাপতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ দিয়েছে। আমরা এটা মানিনা। যাকে নিয়োগ দিয়েছে তাকে যদি সিটি করপোরেশনই নিয়োগ দেয় তাহলে আমাদের তাকে নিয়ে কোন আপত্তি নেই। যেই সভাপতি হিসেবে আসুক সিটি করপোরেশনের মধ্যে আসুক।
ফাইন্যান্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার উর্মি বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিতে গিয়ে বাঁধার শিকার হয়। এ ঘটনার সাথে আমাদের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম স্যার ছিলেন না। তিনি আমাদের মা ছাড়া কোন কথা বলে না। আমাদের স্যারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ক্লাস ক্যাপ্টেন যারা আছি আমরা কিছু জানি না। যারা শিক্ষকদের বহিষ্কার চায় তারা সামনে আসুক তাদের প্রমাণ দিক। আমরা সত্যের পক্ষে আছি ন্যায়ের পথে আছি।
এসময় শিক্ষার্থীরা পাচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-কলেজ গভর্নিং বডিতে সিটি করপোরেশনের মেয়র অথবা প্রশাসককে সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের সম্মানের জায়গা! সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে কলেজ থেকে নিজ ইচ্ছায় আগত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের সভাপতি পদ থেকে প্রত্যাহার চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করার অধিকার কারো নাই। আমরা এই কলেজের অধ্যক্ষের দূর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত চাই। সম্মানিত শিক্ষকরা যারা শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য ও উস্কানি দিয়ে রাস্তায় নামিয়েছেন তাদের দূর্নীতির সঠিক তদন্ত চাই। যেসব শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে তাদের আর্থিক সুবিধা যাতে পায় তার নিশ্চয়তা চাই। সবশেষে এ ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রেখে পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশ চাই।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা আরোও বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ মেয়র তাপসের সময় ৩০ এপ্রিল ২০২৪ যোগদান করেন এবং যোগদানের প্রথম মাস তথা মে মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস মিলিয়ে এক লক্ষ একুশ হাজার টাকা বেশি নেন, যা চরম আর্থিক দুর্নীতি। দ্বিতীয় মাসেও ঐ পরিমাণে বেতন আবারো নিয়ে গেলে সিটি কর্পোরেশন অডিট শাখা থেকে তদন্ত করে দেখা যায় সে অতিরিক্ত বেতন গ্রহণ করেছেন। ফলে যাচাই-বাছাই এর জন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা তিন মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বেতন বন্ধ হওয়ার এটি একটি অন্যতম কারণ। অধ্যক্ষের অর্থনৈতিক দুর্নীতির জন্য সবাইকে তথা শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের অর্থনৈতিক দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয়। আবার তিনি সহকারী অধ্যাপক হলেও এই কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর অধ্যাপক পদবী ব্যবহার করতে শুরু করেন। তিনি কলেজের লাইব্রেরীর নামে বই কেনার জন্য সাংস্কৃতিক মন্ত্রালয় থেকে ছয় লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু কলেজকে অবহিত করেন ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু সে টাকা দিয়েও তিনি বই কিনেন নাই।
এ বিষয়ে মহানগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো সবই অসত্য কথা। লাইব্রেরীর কলেজে ফান্ডে সাধারণ তহবিলে টাকা পরে আছে উত্তোলন করা হয় নাই। আর আমার বেতন নিয়ে অ্যাকাউন্টস যোগবিয়োগ যে ভুলগুলো আছে সেগুলো অনেক আগেই কারেকশন হয়ে গেছে। এগুলো গর্ভনিং বডি কারেকশন করে ফেলেছে। এ নিয়ে আর আপত্তির কিছু নেই। হয়তো শিক্ষার্থীরা এগুলো জানে না।
তিনি আরোও বলেন, লাইব্রেরীর টাকা ফান্ডে পড়ে আছে। সেটা গভর্নিং বডি সিদ্ধান্ত নিয়ে বই ক্রয় করার জন্য বাজেট হবে; টাকা উত্তোলন কমিটি হবে সেটা তো অনেক পরের কথা। সাধারণ তহবিলের টাকাতো সাধারণ কারো উত্তোলন করার সুযোগ নেই সভাপতি ছাড়া।
এমআই