মুরাদ হোসেন:
আন্তর্জাতিক গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং সংস্থা ‘অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স’ এ সম্প্রতি প্রকাশিত সেরা গবেষকের তালিকায় স্থান পাওয়া দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক রেজাউল করিম বলেছেন, একটি দেশের অগ্রগতি বিজ্ঞান ও গবেষণার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। গবেষণায় আগ্রহী হলেই দেশ উন্নত হবে। গবেষণা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তার সাথে কথা বলেছেন হাবিপ্রবি প্রতিনিধি মুরাদ হোসেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।
এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শুরুতেই আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই। সেরা গবেষকের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বিষয়টি কেমন লাগছে?
এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং সম্মানের বিষয়। সেরা গবেষকের তালিকায় স্থান পাওয়া আমার গবেষণার জন্য একটি বিশাল স্বীকৃতি। এটি শুধু আমাকে উৎসাহিত করছে না, বরং ভবিষ্যতে আরও উন্নত গবেষণা করার অনুপ্রেরণাও দিচ্ছে।
আপনার কতটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, কতটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ?
এখন পর্যন্ত ছয়টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছি; যার মধ্যে তিনটিতে আমি প্রথম লেখক (প্রথম অথর) এবং বাকি তিনটিতে সহ-লেখক (কো-অথর) হিসেবে আছি। এছাড়া, আরও দুইটি পেপারে প্রথম লেখক হিসেবে দুইটি জার্নালে জমা দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো বর্তমানে রিভিউয়ের অধীনে রয়েছে। পাশাপাশি, আরও দুটি পেপার বর্তমানে খসড়া (ড্রাফটিং) পর্যায়ে আছে, যা শীঘ্রই জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
একটি পেপার প্রকাশ করতে পরিশ্রম বা সময় কেমন লাগে?
একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে অনেক ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। গবেষণার প্রতিটি ধাপ (লিটেরাচার সার্ভে, বিশ্লেষণ, এক্সপেরিমেন্ট ডিজাইন,ল্যাব ওয়ার্ক, লেখালেখি এবং সংশোধন) সময়সাপেক্ষ এবং যত্ন সহকারে করতে হয়। এছাড়াও, গবেষণার ফলাফলকে নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করা এবং রিভিউয়ারদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মানব কল্যাণে গবেষণা গুলো কিভাবে অবদান রাখতে পারে?
বহু সেরা গবেষক তাদের গবেষণার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং মানব কল্যাণে অবদান রাখেন। তারা শুধুমাত্র একাডেমিক দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে তাদের গবেষণার ফলাফলগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগের পথও বের করেন। উদাহরণস্বরূপ, ন্যানোটেকনোলজি বা পলিমার কেমিস্ট্রি নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা বায়োমেডিক্যাল ডিভাইস, স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল বা পরিবেশ বান্ধব উপাদান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
একজন ভালো গবেষক হতে হলে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি বলে মনে করেন?
গবেষণায় সাফল্যের জন্য যে কিছু বৈশিষ্ট্য অপরিহার্য তা হলো দীর্ঘমেয়াদী অধ্যবসায়, সততা, এবং গবেষণা তথ্যের যথার্থতা রক্ষা করা।
শিক্ষার্থীরাও চাইলে তাদের গবেষণাপত্র দিতে পারে/দিচ্ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে বেশি আগ্রহী হতে তাদের জন্য পরামর্শ কি থাকবে?
শিক্ষার্থীদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, গবেষণার প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি করতে হবে এবং ধৈর্য্য ধরে প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। মানসম্মত গবেষণা করার জন্য একজন ভালো মেন্টর বা সুপারভাইজারের দিকনির্দেশনা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া নিয়মিত নতুন নতুন গবেষণা পেপার পড়া এবং লিটারেচার রিভিউয়ের মাধ্যমে নিজেকে আপডেট রাখা উচিত।
সেরা গবেষকের বিষয়ে আপনার নিজস্ব মন্তব্য থাকলে বলবেনঃ
সেরা গবেষক হওয়া শুধু স্বীকৃতি নয়, এটি দায়িত্ববোধও সৃষ্টি করে। গবেষণায় মানসম্মত কাজ করার পাশাপাশি সমাজের কল্যাণের জন্য এমন গবেষণায় মনোনিবেশ করা উচিত যা বাস্তব জীবনে সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সেরা গবেষক সম্পর্কে কিছু বলার আগে, তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। একজন সফল গবেষক হতে গেলে কি কি লাগে তা বোঝা জরুরি। গবেষকেরা সাধারণত নতুন ধারণা উদ্ভাবন এবং জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজ্ঞান বা অন্য কোনো ক্ষেত্রের অগ্রগতিতে অবদান রাখেন। সেরা গবেষক হওয়ার জন্য কেবল তত্ত্বগত জ্ঞান নয়, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, কৌতূহল, সৃজনশীলতা, এবং নতুন সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী মনোভাব প্রয়োজন।
এমআই