ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার ৮ বছর পার হলেও কলেজগুলোতে নানা ধরনের সমস্যা কাটছেই না। প্রতিবছর নীলক্ষেত মোড় থেকে দফায় দফায় ঘোষণা আসে দাবি-ধাওয়া।
এত বছর স্থায়ী সমস্যার পথ তৈরি করতে না পারায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাত কলেজ প্রশাসনের ব্যর্থতা দেখছে শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সমস্যা উত্তরণে এবার দাবি জানিয়েছে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের।
দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাতটি কলেজের উন্নয়নে যেসব সংস্কার প্রয়োজন ছিল-
১) ঢাবির প্রকৃত সিলেবাস অনুসরণ করে সেমিস্টার পদ্ধতি ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা।
২) আয়াতনে ছোট কলেজ গুলো- কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে অর্ধেক বিভাগ বিলুপ্ত করা। এরফলে ক্লাস রুম সংকট দূরীকরণ হতো। ছেঁটে ফেলা বিভাগের শিক্ষকদের অন্য কলেজে বদলি করা। এতে করে শিক্ষক সংকট দূর হতো বাকি কলেজগুলোতে।
৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রেখে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা করে সাত কলেজের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা।
ক্লাসে উপস্থিতি বাড়াতে যে উদ্যেগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের-
১) প্রতিটি বিভাগে এক টাইম টেবিলে সকল কলেজে ক্লাস শুরু করা।
২) ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে উপস্থিতি সংরক্ষিত করা। আর যেটি সংরক্ষিত থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সার্ভারে।
৩) পরীক্ষার আগে স্টুডেন্ট আইডিতে দেওয়া হবে ফর্মপূরণ ও প্রবেশপত্র। ৭৫% উপস্থিত না থাকলে আইডিতে শো করবে না ফর্মপূরণের ট্যাব। অর্থ্যাৎ নিয়মিত ক্লাস না করলে ঢাবির নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় বসার সুযোগও হারাবে শিক্ষার্থীরা।
আসন সংখ্যা সংস্কার:
কলেজগুলোর ধারণক্ষমতার চেয়েও কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়ে থাকে। প্রায় সময় দুই শিপটে একটি বিভাগের ক্লাস হয়ে থাকে। স্কুল কলেজের মতো করে শাখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হতে দেখা না গেলেও সাত কলেজে দেখা গেছে।
বছরের ৬ মাস ৭কলেজে পরীক্ষা লেগেই থাকে। তার ওপরে রয়েছে বিভাগের শিক্ষক সংকট; সবকিছু মিলিয়ে মানসম্মত পাঠদানের বাহিরে রয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
অনার্স ৪ টি বর্ষ; মাস্টার্স ১ম ও মাস্টার্স ২য় পর্ব; সাথে রয়েছে ডিগ্রি ৩ টি সেশন ও ইন্টার এক্সাম। এসব এক্সামের সময়ে কলেজের গেটের আশেপাশেও যাওয়া যায় না। মোট ১০ টি শ্রেণীর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ৬ মাস। সেহেতু ৭ কলেজে শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ ৮ মাস; সেহেতু ক্লাসের সুযোগ পায় খুব কম। এরমধ্যেও রয়েছে নানা সরকারি বন্ধের দিন।
অবকাঠামো উন্নয়ন:
একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা। তাতে করে ক্লাস রুম সংকট দূর হবে। পরীক্ষার সময়ে ক্লাস চলমান রাখতে 'পরীক্ষা'র জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা। একেই সাথে আবাসন ব্যবস্থার দিকেও নজর দেওয়া।
উল্লেখ্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর থেকে কলেজগুলো নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা বিরাজ করছে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (কলেজ) সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যদিও এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের কমিশন গঠন করতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ৭ কলেজ সংস্কারের প্রতিনিধিরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। কলেজগুলো হল- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
লেখক: মমিনুল হক খান
সাবেক শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী