সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী,বাকৃবি প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর এলাকায় খাদ্য সংকটে থাকা বানরদের জন্য প্রায় ৪ শতাধিক বিভিন্ন ফলজ গাছ রোপণ করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন মিশন গ্রিন বাংলাদেশ। শনিবার (১৬ নভেম্বর, ২০২৪) তারা এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করেন। এই উদ্যোগে আর্থিক সহযোগিতা করেছে জার্মান প্রবাসী সংগঠন আশা (Asha-hoffnung für Bangladesh e.V.) এবং সৈয়দ শাকিল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।
জানা গেছে, ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনবিট ও রাবার প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে প্রায় ৫০০ বানর বসবাস করছে। তবে বনাঞ্চল উজাড় এবং স্থানীয় ফলজ গাছের অভাবের কারণে এসব বানরের খাবারের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে পর্যটকদের দেওয়া খাবার। সন্তোষপুর বিট অফিসের আশপাশে বানরের খাবার বিক্রি করতে তিনটি ভ্রাম্যমাণ দোকান থাকলেও তা প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
পরিবেশবাদী সংগঠন মিশন গ্রিন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংস্থাগুলো স্থানীয় পরিবেশ ও প্রাণিকুল রক্ষায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি বলেন, 'এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। ফলজ গাছগুলো শুধু বানরের খাদ্য সরবরাহ করবে না, পাশাপাশি বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্যও ফিরিয়ে আনবে।'
এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন জার্মান প্রবাসী সৈয়দ শাকিল, যিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে সন্তোষপুরের বানরদের খাদ্য সংকট সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি বলেন, 'ভিডিওতে বানরগুলোর করুণ অবস্থা দেখে আমি খুব মর্মাহত হই। বনাঞ্চলটি প্রায় ফলহীন, তাই তারা খাবারের জন্য পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিষয়টি জানার পর আমি মিশন গ্রিন বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ফলজ গাছ রোপণের পরিকল্পনা গ্রহণ করি।'
মিশন গ্রিন বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ আবুল বাশার মিরাজ বলেন, 'আমরা পেয়ারা, আম, জাম, আমড়াসহ অন্যান্য স্থানীয় ফলজ গাছ রোপণ করেছি, যা দ্রুত ফল দিতে সক্ষম। এগুলো বানরের খাদ্য চাহিদা পূরণ করবে এবং বনাঞ্চলের পরিবেশ উন্নত করবে। পরিবেশ ও প্রাণিকুল রক্ষায় এ ধরনের উদ্যোগ দেশের টেকসই উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ময়মনসিংহ রসুলপুর রেঞ্জের সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, 'বানরদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের স্বাস্থ্য ও বংশবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। গাছগুলো বেড়ে উঠলে বানরের খাদ্য সংকট অনেকটাই দূর হবে বলে আমরা আশা করছি।'
এদিকে উদ্যোগের আওতায় রোপণকৃত গাছগুলোর পরিচর্যা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সংগঠন রক্তদানে ফুলবাড়িয়, ক্লিন আপ বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্থানীয়রা প্রকৃতির প্রতি আরও যত্নশীল হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই উদ্যোগ একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের সদস্যরা জানান, ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।
তানহা আজমী