সময় জার্নাল ডেস্ক:
বর্তমানে বিশ্বের সবেচেয়ে লম্বা নারী তুর্কির বাসিন্দা রুমেসা লাগি। ২০২৩ সালের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অধিকারী হয়েছেন তিনি। তার উচ্চতা ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি বা ২১৫ সেন্টিমিটার। ২৬ বছর বয়সী রুমেসা ২০২২ সালে একাধিক রেকর্ডের অধিকারী হয়েছিলেন। সেই সময়ও নাম উঠেছিল গিনেস বুকে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাত, দীর্ঘতম আঙুল ও দীর্ঘ পিঠের অধিকারী হিসেবে তকমা দেওয়া হয়েছিল তাকে। এবার গড়লেন বিশ্বের সবেচেয়ে লম্বা নারীর রেকর্ড। রুমেসার এই অস্বাভাবিক উচ্চতার কারণ মোটেই স্বাভাবিক নয়।
মাত্র চার মাস বয়সে ওয়েভার সিনড্রোম ধরা পড়ে রুমেসার। এই রোগে আক্রান্তদের শরীরের হাড় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। ফলে বুদ্ধি হ্রাস পায় এবং সেই সঙ্গে শক্ত পেশী তৈরি হয়ে থাকে শরীরে। ওয়েভার সিনড্রোম ধরা পড়ায়, শরীরে আরও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা গিয়েছিল রুমেসার। মুখের বিকৃতির পাশাপাশি গলার স্বর কর্কশ হয়ে যায়। ফলে ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে।
মাত্র ছয় বছর বয়সে তার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। একজন প্রাপ্তবয়স্কের মতো দেখাত তাকে। অস্বাভাবিক লম্বা হওয়ার জন্য চড়তে পারতেন না গাড়িতে। বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে যাতায়াত করতে হত তাকে। তবে জীবনে প্রথমবার বিমান চড়ার অভিজ্ঞতা এখনো কিছুতেই ভুলতে পারেননি রুমেসা। গত বছর তু্র্কি থেকে সান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় বিমানের ছয়টি আসন সরিয়ে তাকে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল তুর্কি এয়ারলাইন্স। একটি স্ট্রেচারে করেই সান ফ্রান্সিসকো গিয়েছিলেন রুমেসা।
অন্যদিকে বিশ্বের সবেচেয়ে খাটো নারী জ্যোতি আমগের উচ্চতা মাত্র দশমিক ৬৩ মিটার। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে খাটো জীবিত নারী। জ্যোতি ভারতের বাসিন্দা।
১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণকারী বিশ্বের সবচেয়ে খাটো নারী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। তার উচ্চতা মাত্র ২৪ ইঞ্চি। ১৮ তম জন্মদিনে জ্যোতি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বের ক্ষুদ্রতম জীবিত নারী’ হিসাবে গিনেস বুক রেকর্ডে নিজের নাম লেখান।
জ্যোতি আখোড্রিপ্লাসিয়া নামক জেনেটিক ডিসর্ডারে ভুগছেন। ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘বডি শক’ নামক এক ডকুমেন্টারিতে জ্যোতি প্রথম মিডিয়ায় উপস্থিত হন। এ ছাড়াও, বিগ বস টেলিভিশন শো’তেও অতিথি হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন জ্যোতি। তিনি ২০১৪ সালে আমেরিকান হরর স্টোরির চতুর্থ সিজনে মা পেতিতে চরিত্রে অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি জ্যোতি একজন রাঁধুনি, উদ্যোক্তা এবং লেখক।
তুরস্কের ওয়েব ডিজাইনার রুমেইসা গেলগি ও ভারতের অভিনেত্রী জ্যোতি আমগের উচ্চতার পার্থক্য ১৫২.৩৬ সেন্টিমিটার (৫ ফুট)।উচ্চতায় বিশাল ফারাক থাকলেও দেখা করার পর তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগেনি। দু’জনে একসঙ্গে দারুণ কিছু মুহূর্ত কাটান।বিবৃতিতে ২৭ বছর বয়সী রুমেইসা গেলগি বলেন, “আমাদের মধ্যে কিছু মিল আছে। আমরা দুজনেই মেকআপ, নিজেকে সুন্দর রাখা, গয়না এবং নখ সাজানোর ব্যাপারে আগ্রহী।“আমাদের উচ্চতার পার্থক্যের কারণে চোখে চোখ রাখা কঠিন ছিল, তবে অভিজ্ঞতাটি দারুণ।”
অন্যদিকে ৩০ বছর বয়সী জ্যোতি আমগে জানান, তার মতো রেকর্ডধারী আরেকজনের সঙ্গে দেখা করতে পেরে তিনি ‘খুব খুশি’।
২০২১ সালে রুমাইসা গেলগিকে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তার এই অস্বাভাবিক উচ্চতার জন্য দায়ী উইভার সিনড্রোম নামের একটি শারীরিক অবস্থা, যা বিশ্বের মাত্র ২৭ জনের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে।
গেলগি আরও কয়েকটি রেকর্ডের অধিকারী, যেমন একজন নারীর সবচেয়ে বড় হাত (২৪.৯৩ সেন্টিমিটার), সবচেয়ে লম্বা পিঠ (৫৯.৯০ সেন্টিমিটার) এবং সবচেয়ে লম্বা কান (৯.৫৮ সেন্টিমিটার)।
অন্যদিকে, ভারতে জন্ম নেওয়া জ্যোতি আমগে অ্যাকন্ড্রোপ্লাসিয়া নামের হাড়ের বৃদ্ধিজনিত এক বিরল রোগে আক্রান্ত।তবে স্বল্প উচ্চতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি একজন সফল অভিনেত্রী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর সম্পাদক ক্রেইগ গ্লেনডে এই দুই নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের ভিন্নতাকে উদযাপন করার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “এমন অসাধারণ দুই নারীর সাক্ষাৎ ভিন্নতার সৌন্দর্য ও জীবন সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সামনে তুলে ধরেছে।”
সম্প্রতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ২০ তম বার্ষিক দিবস উপলক্ষে, জ্যোতি আমগে এবং রুমেইসা গেলগি এক হয়েছিলেন। তাদের একসঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্ত শেয়ার করেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। দুই নারীই গিনের ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অন্যতম দুই সদস্য।
তানহা আজমী