শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

শিক্ষাঙ্গনে নেতৃত্ব সংকট: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পুনর্গঠন সময়ের দাবি

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ১৬, ২০২৫
শিক্ষাঙ্গনে নেতৃত্ব সংকট: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পুনর্গঠন সময়ের দাবি

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম:

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নয়, এটি জাতির উন্নয়ন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের সামাজিক পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু গত কয়েক দশকে, বিশেষত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে, আমাদের শিক্ষাঙ্গন নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে।  

 বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব সংকটের কারণ  

গত দেড় দশকে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে উপাচার্য নিয়োগের প্রবণতা শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতা ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যোগ্য নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই নেতৃত্ব সংকটের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:  

১. **রাজনৈতিককরণ:** ফ্যাসিবাদী শাসনামলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব নির্বাচনে মেধার পরিবর্তে দলীয় আনুগত্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, সৃজনশীলতা, জ্ঞানচর্চা এবং গবেষণা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।  
২. **স্বাধীনতার অভাব:** বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তারা রাজনৈতিক শাসকদের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি, যার ফলে শিক্ষার মান নেমে গেছে।  
৩. **বুদ্ধিবৃত্তিক নিপীড়ন:** শিক্ষকদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। যারা শাসকের নীতির বিরোধিতা করেছেন, তাদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।  
৪. **অযোগ্য নেতৃত্ব:** যোগ্য এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ নীতিমালা ও পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট।  

### বিশ্ববিদ্যালয় পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা  

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের গৌরবময় ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে এবং শিক্ষা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের হৃৎপিণ্ড হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।  

১. **মেধাভিত্তিক নিয়োগ:** উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং মেধাভিত্তিক হতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনে শিক্ষকের যোগ্যতা, দূরদর্শিতা এবং শিক্ষাঙ্গনের উন্নয়নের পরিকল্পনা বিবেচনা করা উচিত।  
২. **স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা:** বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে তারা যেন গবেষণা, শিক্ষা এবং নীতিনির্ধারণে কাজ করতে পারে।  
৩. **পুনর্বাসন:** যারা অন্যায়ভাবে চাকরি হারিয়েছেন, তাদের পুনর্বহাল করে শিক্ষাঙ্গনের সঠিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।  
৪. **দূরদর্শী নেতৃত্ব:** শিক্ষাক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তন আনতে কৌশলী ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব প্রয়োজন।  
৫. **রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন:** বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গণতন্ত্র এবং সামাজিক পরিবর্তনের চর্চাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।  

### ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা  

বর্তমান সময়ে জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং নতুন প্রজন্মের ছাত্র সংগঠনগুলো নেতৃত্ব সংকটের সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। নতুন নেতৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।  


শিক্ষাঙ্গনের নেতৃত্ব সংকট সমাধানে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে সেগুলো আবারও জাতীয় উন্নয়ন, জ্ঞানচর্চা এবং গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক: ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল