মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে বিএনপির একগুচ্ছ প্রস্তাবনা

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ৪, ২০২৫
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে বিএনপির একগুচ্ছ প্রস্তাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ এই তিন মেয়াদী প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বিএনপি। যেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। দলটি বলছে, ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাজ্যের আলোকে বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।

বিএনপির প্রস্তাবনায় রয়েছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ইউনিয়নভিত্তিক গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ ও স্বাস্থ্য কার্ড প্রবর্তনসহ স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে সংস্কারের সুপারিশ। যার মধ্যে রোগী ও সেবাপ্রদানকারীদের জন্য সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়ন ও সব হেলথ কমপ্লেক্সকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ।

এছাড়া আগামী ৫ বছরের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। পাশাপাশি ওষুধ রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নতিকরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

মঙ্গলবার রাজধানী গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংস্কার কমিশনে দেওয়া বিএনপির প্রস্তাবনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

এতে দলের প্রস্তাবনার তুলে ধরেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

প্রত্যেক সংস্কারের বিষয় সরকারকে রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে জনবান্ধব প্রস্তাব গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থে যে সুপারিশগুলো করা হবে সেগুলো সংস্কারে প্রাধান্য দিতে।

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ড. মোশাররফ জানান, একটি নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই জনপ্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন সম্ভব।

ওষুধ শিল্প আওয়ামী লীগের একজন ব্যক্তির কাছে এতদিন কুক্ষিগত ছিল দাবি করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে রোগীদের মধ্যে বিদেশমুখিতা বেড়েছিল। এতে ভেঙে পড়ে দেশের স্বাস্থ্যখাত।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের প্রস্তাবনাগুলো বিএনপির অফিসিয়ার ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিচে তুলে ধরা হলো—

স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাবনা 
১. স্বল্পমেয়াদি (১-৩ বছর) 
• প্রতিরোধের মাধ্যমে সুরক্ষিত স্বাস্থ্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা-প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে ইউনিয়ন সাব-সেন্টার উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত সংখ্যক ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী’ নিয়োগ।
• উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে- সেবার গুণগত মান উন্নয়ন এবং কার্যকরী প্রাথমিক রেফারেল সেন্টার হিসেবে রুপান্তর, প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করা, পুষ্টিবিদ ও পরিকল্পিত পরিবার ও জনসংখ্যার ব্যবস্থাপনা। 
• জিপি (জেনারেল ফিজিশিয়ান) অধীনে প্রত্যেক নাগরিককে একজন সরকারী রেজিস্টার্ড চিকিৎিসকের অধীনে রাষ্ট্রীয় খরচে সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থার প্রবর্তন। 
• বিদ্যমান দ্বিতীয় (জেলা ও সদর হাসপাতাল) এবং তৃতীয় স্তরের বিষেশায়িত স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ ও সঠিক রেফারেল সিস্টেম বাস্তবায়ন। কিডনী, ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ চিকিৎসাসহ ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন, জরুরি সেবা, দুর্ঘটনা পরবর্তী সেবা, দ্রুত রোগী স্থানান্তর ব্যবস্থাপনা।
• স্বাস্থ্যসেবায় ন্যায় বিচার, রোগী ও সেবা প্রদানকারীর জন্য সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়ন।
• সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্ক উন্নয়নের কার্যকর ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও মিডিয়ার যথাযথ এবং ইতিবাচক ব্যবহার ।

২. মধ্যমেয়াদি (১-৫ বছর) 
• স্বাস্থ্য কার্ড প্রবর্তন ও স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা প্রবর্তন।

৩. দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাবনা:

• আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতা সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ।
• স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষনা এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে স্বক্ষম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ।
• স্বাস্থ্য পর্যটন উপযোগী একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্মান স্বাস্থ্যপরিকাঠামো নির্মাণ।

(ক) প্রস্তাবনা:
প্রতিরোধের মাধ্যমে সুরক্ষিত স্বাস্থ্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উন্নয়ন ও “গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী” নিয়োগ।
উদ্দেশ্য: 
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করার জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সংক্রামক ও অসংক্রামক উভয় ধরণের রোগের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। একইসঙ্গে, গ্রামীণ জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী’ নিয়োগ করা।
• যার ৭০ শতাংশ হবে নারী
• সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি
• নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নের ১০০% জনসংখ্যাকে সেবার আওতায় আনা।

(খ) প্রস্তাবনা:
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স- সেবার গুণগত মান উন্নয়ন এবং কার্যকরী প্রাথমিক রেফারেল সেন্টার হিসেবে রুপান্তর - (সরকারী ব্যবস্থাপনা)
বিদ্যমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে প্রাথমিক রেফারেল সেন্টার হিসেবে শক্তিশালীকরণ- বিস্তারিত প্রস্তাবনা ও বাস্তবসম্মত সমাধান । 
সেবা অধিক্ষেত্র
• প্রতিটি হেলথ কমপ্লেক্সকে পর্যায়ক্রমে  ১০০ শয্যায় উন্নিত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগে দেয়া। 

জরুরি স্বাস্থ্যসেবা: 
• মাতৃসেবা, শিশু স্বাস্থ্যসেবা, জরুরী অস্ত্রপাচার সেবার সম্প্রসারণ।
• পরবর্তী সেবার ধাপে চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তার জন্য রেফারেল সার্ভিস প্রবর্তন। 
• রোগী স্থানান্তরের জন্য এ্যাম্বুলেন্স সেবার নিশ্চয়তা বিধান।
• পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম (এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ল্যাবরেটরী সরঞ্জাম ও অন্যান্য চিকিৎসা সহায়তা সংযুক্তকরণ।

(গ) প্রস্তাবনা
বিদ্যমান জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও বিশেষায়িত স্তরের স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ ও সঠিক রেফারেল সিস্টেম বাস্তবায়ন:
জেলা হাসপাতালকে একটি অর্থবহ সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংযুক্ত ইউনিট (Composite Unit Capable of Delivering Comprehensive Care in Health) হিসেবে প্রতিষ্ঠা: 
• বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় জেলা সদর হাসপাতালকে একটি অর্থবহ সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংযুক্ত ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
• পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থার মাধ্যমে সমন্বিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রদান করে রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা। কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি, অনকোলজি, পেডিয়াট্রিকস, গাইনোকোলজি, ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটসহ, জরুরি পরিষেবা এবং অস্ত্রোপচারের সুবিধা, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসোনোগ্রাফি ইত্যাদি ব্যবস্থা সংযোজন করা। 

(ঘ) প্রস্তাবনা 
ঔষধ ও রোগ নির্ণয়ক সুবিধা
• Essential Drug Company Limited-এর ইউনিট ও প্লাটের সক্ষমতা ও সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারী পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতের শতভাগ সক্ষমতা অর্জন।
• ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট বিশ্বাসযোগ্য ও সাশ্রয় করার লক্ষ্যে সরকারি ডায়াগনস্টিক সুবিধা বৃদ্ধি ও ২৪ ঘন্টা চালু করার ব্যবস্থা । 
• আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ওষুধের (API) Active Pharmaceutical Ingredient দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা করা ।
• রপ্তানিযোগ্য ওষুধ-এর আইটেম ও পরিধি বৃদ্ধি এবং দেশের রপ্তানি ঝুঁড়িতে সম্ভাবনাময় তৃতীয় খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ও আগামী ৫ বছরের মধ্যে এর পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ ৷

(ঙ) প্রস্তাবনা:

স্বাস্থ্যসেবা খাতে ন্যায় বিচার: রোগী ও প্রদানকারীর জন্য সমতা ভিত্তিক আইন প্রণয়ন:
• স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ন্যায্য অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। 
• স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি সহিংসতা বা হামলার আমলযোগ্য অপরাধ বিবেচনা করে বাধ্যতামূলক শাস্তির বিধান।
• শুধুমাত্র আইন বা শাস্তি প্রদানই একমাত্র সমাধান নয় বিবেচনায় জনমত তৈরিতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অংশীজনের অন্তর্ভুক্তি। 
• কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধিতে চিকিৎসা শিক্ষায় বিশেষ জোর দেয়া ।
• শিশুকাল থেকে স্কুল ও পরিবারে নিয়ম, শৃংখলা, সহনশীলতা শিক্ষার উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ।

(চ) প্রস্তাবনা:
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার: উন্নত, সাশ্রয়ী, পরিপূর্ণ ও কার্যকরী সেবা প্রদানের নিশ্চয়তায় প্রয়োজনীয় সংস্কারঃ
বাংলাদেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত বর্তমানে অতান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু এর মান ও সাশ্রয় বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন। 
শৃঙ্খলাপূর্ণ মূল্য নির্ধারণ ও মান মনিটরিং 
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মান অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ এবং মূল্যও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক, যা সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয়। 
• অংশীজনের সাথে আলোচনাক্রমে সকল সেবার মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা। 
• চিকিৎসা সরঞ্জাম, জনবল এবং পরিষেবার মান সম্পর্কে একটি Standard Operating Procedure (SOP) নির্ধারণ করা। 
• বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা মান (যেমন: ISO সার্টিফিকেশন) অনুসরণ করা।
• প্রতিযোগীতামূখী করার জন্য সরকারী ডায়াগনোস্টিক ল্যবরেটরী সার্বক্ষনিক সেবার উপযোগী করা।

(ছ) প্রস্তাবনা:
স্বাস্থ্য সংস্কারের জন্য ‘‘স্বাস্থ্য কার্ড’’ প্রোগ্রামের সূচনা: প্রস্তাবনা অথবা এনআইডি কার্ডের সাথে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য তথ্য এনআইডি কার্ড সংযোজন করা।
এই উন্নততর কার্ডের প্রধান উদ্দেশ্য হবে জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশাধিকার সহজ করা এবং তাদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ সহায়তা প্রদান করা। প্রতিটি নাগরিকের এনআইডি কার্ড প্রাপ্তি সাপেক্ষে এটি প্রদান করা এবং পরবর্তী পর্যায়ে সয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ করা।
স্বাস্থ্য কার্ডের সুবিধাসমূহ 
প্রতিটি নাগরিক পর্যায়ক্রমে নিজ এলাকায় বিনা খরচে নির্দিষ্ট একজন রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসকের অধীনে সরকারি খরচে আধুনিক চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় সুবিধা ও ঔষধ প্রাপ্ত হবেন (উন্নত বিশ্বের GP সিস্টেমের আলোকে): 
• তথ্য সংরক্ষণ, প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য, যেমন- রোগের ইতিহাস, চিকিৎসা, ভ্যাকসিনেশন ইত্যাদি স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা। এটি ডাক্তারদের জন্য রোগীর পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানতে সাহায্য করবে।
• ভবিষ্যতে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে এই কার্ড চিপ জরুরী পরিস্থিতিতে কার্ডধারীকে দ্রুত সহায়তা প্রদানে সক্ষম হবে।
• কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আলোকে এই কার্ড মোবাইলের অ্যাপে সহযোগী হিসেবে স্বাস্থ্য ও জরুরী পর্যায়ে পরামর্শ প্রদান করবে।

(জ) প্রস্তাবনা:
স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ ব্যবস্থার অটোমেশন: পুরো স্বাস্থ্যসেবা কাগজবিহীন ডকুমেন্টেশন  ও অনলাইন ভিত্তিক সেবা সরবরাহ ব্যবস্থার অটোমেশন প্রবর্তন:
• ডিজিটাল স্বাস্থ্য রেকর্ড (EHR) : ডিজিটাল স্বাস্থ্য রেকর্ড ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের সমস্ত চিকিৎসা ইতিহাস, পরীক্ষার ফলাফল, প্রেসক্রিপশন এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য একক প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষণ করা ।
• হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার অটোমেশন : রোগী বুকিং এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম, হাসপাতালে রোগী দেখানোর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম চালু করা, যা রোগীর জন্য তার সুবিধামত সময় বাছাই করতে সহায়তা করবে । 

(ঝ) প্রস্তাবনা:
পর্যায়ক্রমিকভাবে দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচিতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার বৈশ্বিক মান নিশ্চিতকরণ:
বাংলাদেশের ডাক্তার, নার্স এবং টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান, যাতে তারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করেন।
প্রতিষ্ঠানগত যৌত্তিকিকরণ ও মেডিকেল কলেজগুলোর নিরীক্ষণ ও পুনর্গঠন: দেশের ১১১টি মেডিকেল কলেজ (৩৭ সরকারি, ৬৮ বেসরকারি, ও সামরিক) এর একটি ব্যাপক নিরীক্ষণ করা, যাতে তাদের প্রয়োজনীয়তা এবং কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা । শিক্ষক সংকট সমাধান ও পাঠ্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। 
নার্সিং ও টেকনোলজি শিক্ষা: 
• নার্সিং এবং মেডিকেল টেকনোলজির পাঠ্যক্রম আন্তর্জাতিকমানের সিলেবাস অনুযায়ী হালনাগাদ করা ।
• নার্সিং শিক্ষায় মেধাবীদের অংশগ্রহণের উৎসাহ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ।
• শিক্ষা কোর্সে দ্বিতীয় ও তৃতীয় আন্তর্জাতিক ভাষায় (spoken) কথ্য দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ।
• বেসিক সাইন্সের শিক্ষকদের আগ্রহীকরণের লক্ষ্যে সম্মানজনক বেতন ও প্রণোদনা প্রদান ।
দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তি:
• আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সহায়ক বন্ধু-প্রতিম দেশের সাথে পারস্পারিক বিশেষজ্ঞ ও টেকনোলজি বিনিময় যোগ্য করতে- সুবিধা সমন্বিত যৌথ সহযোগিতায় হাসপাতাল নির্মাণ ও উন্নততর এবং সর্বাধুনিক সেবায় সুবিধা সম্প্রসারণ।
• দীর্ঘ মেয়াদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষকের উপস্থিতিতে দেশের তরুণ চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ব্যবস্থা 
• শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাক্রেডিটেশন:
• দেশের মেডিকেল ও নার্সিং World Federation for Medical Education (WFME) Ges International Council of Nurses (ICN) থোক অ্যাক্রেডিটেশন নেওয়া । 
• বাংলাদেশের চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক মান অর্জনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সকল ভাবে প্রস্তুত করা ।
অধিকতর উন্নয়ন ও সমন্বয়ের জন্য:
• প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে- প্রাথমিক সহায়তা (Fast Aid), দুর্ঘটনায় করণীয়, ইনজুরি-এর ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি প্রয়োগিকভাবে শিক্ষা প্রদান।
• পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক চিকিৎসা ও CPR, Rescue ইত্যাদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। 
• WHO Safety Guideline অনুসরণ পূর্বক সম্ভাব্য চিকিৎসা ঝুঁকি নিরসন।
• প্রয়োজনীয় সকল স্তরে মানসম্পন্ন পণ্য যন্ত্রপাতি সেবা ক্রয় ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে procurement ও স্পেসিফিকেশন প্রশিক্ষণ প্রদান।

(ঞ) প্রস্তাবনা:

চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে ব্যবস্থাপনার পরিচালন সেবার পুনর্বিন্যাস এবং পর্যায়ক্রমে জিডিপির ন্যূনতম ৫% বিনিয়োগ (উদ্ভাবনী অর্থায়ন পদ্ধতিতে) ও স্বাস্থ্য বীমা চালুকরণ:
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি ও অর্থায়ন পুনর্বিন্যাস: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে GDP-এর মাত্র ২-৩% ব্যয় হয়, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। অধিকাংশ মানুষ ব্যক্তিগত অর্থায়নের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করেন, যা তাদের আর্থিক সংকটে ফেলে। এই সমস্যার সমাধানে পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে জিডিপি’র পর্যায়ক্রমে ন্যূনতম ৫% বরাদ্দ করা। 
স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা উন্নয়ন: স্বাস্থ্য বীমা প্রবর্তন এবং তা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজান, যাতে জনগণ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক ঝুঁকি কমাতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থায়িত্বে সহায়ক হয়। 

(ট) প্রস্তাবনা: ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়াবলি-
• Institute of Health Technology (IHT) সমূহের মানউন্নয়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী, দক্ষ এবং মানসম্পন্ন মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ এবং তাদের দেশ ও বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা । 
• চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে BMRC-কে শক্তিশালী করা হবে। এছাড়া মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজ ও সমূহে রিসার্স সেল-এর মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং বাজেট বরাদ্দ করা। 
• BMRC-কে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল গবেষণার তদারকি, Ethical প্রত্যয়নসহ গবেষণার ক্ষেত্রে রেগুলেটরি সংস্থা হিসেবে কার্যকরী করা।
• স্নাতকোত্তর পর্যায়ে একই বিষয়ে বিদ্যমান একাধিক ডিগ্রি মান অনুযায়ী সমন্বয় সাধন করা।
• ২০০১-০৬ সময় কালে চিকিৎসক - নার্স ও সহায়ক সেবা কর্মীদের ব্যবস্থাপনা, ক্রয়, প্রশাসনিক ও সাধারনের সাথে যোগাযোগ সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে সরকারি ভাবে সৃষ্ট জাতীয়, প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট-এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করন।

এতে আরও বলা হয়, সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা ক্রমাগত বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও পরিশীলনের মাধ্যমে বাস্তবধর্মী ও প্রয়োগযোগ্যভাবে বাস্তবায়নই সফলতার মূল কথা। এই বিবেচনায় উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবটি একটি ধারণাগত কাঠামো। চলমানভাবে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক পর্যালোচনা, অংশীজনের চাহিদা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে যেকোন সংস্কার প্রস্তাব জনকল্যাণে কার্যকরভাবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। 

জনকল্যাণমূখী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সকলের মতামতকে পুনঃমর্যদা প্রদানের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল