মো. মাহিদুজ্জামান সিয়াম, গবি প্রতিনিধিঃ
লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি মুক্ত সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ক্যাম্পাসে চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের আনাগোনা। দীর্ঘ ২৬ বছর পথচলায় ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত থাকলেও সম্প্রতি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর নানাবিধ তৎপরতায় বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা লক্ষণীয়। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির সহ বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন নানা কৌশলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছে; যা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘকালীন রাজনীতি নিরপেক্ষ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন গবিতে সক্রিয় হতে শুরু করে। অথচ ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতি চর্চায় ছাত্র সংসদের বিধান রয়েছে। তবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনের পর অদৃশ্য কারণে আর কখনোই ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতির আনাগোণার অন্যতম কারণ হিসেবে এটাও মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের অভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল গবিতে তাদের শাখা গঠনের লক্ষ্যে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা 'গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল' নামে পরিচিত হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি, মিছিল, দিবস পালন, ইফতার আয়োজন ও পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ পরিচালনা করছে।
এসব কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুর রহমান বিজয়কে। তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করছি, তবে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ব্যানার নিয়ে ঢুকিনি। প্রশাসন যদি আমাদের বহিষ্কার করে, তবুও কিছু করার নেই। গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী আমাদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে কোথাও লেখা থাকে যে প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করা নিষিদ্ধ, তাহলে প্রশাসন তা উপস্থাপন করুক।'
গবিতে বাম ঘরানার সংগঠনগুলোর তৎপরতা সম্পর্কে খোঁজ নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে রসায়ন বিভাগের নাসিম খানের বিরুদ্ধে। তবে তিনি অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।
নাসিম খান বলেন, 'আমি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নই। এ ধরনের অভিযোগ ব্যক্তিগত বিরোধিতা থেকে উঠে আসতে পারে। আবার কেউ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যও এমন অপপ্রচার চালাতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাঠামোই সমাজতান্ত্রিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা কোনো দলীয় রাজনীতি করি না বরং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্র থেকে আমাদের অনুরোধ করা হলেও ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় আমরা এখনো কোনো কমিটি গঠন করিনি। আমি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্যপদ পেয়েছি, তবে এখন পর্যন্ত সেখানে আমি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম না থাকলেও ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় তাদের সদস্য সংগ্রহ তৎপরতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী গণস্বাস্থ্য পিএইচ কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের ব্যানারে একটি প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে দেখা যায়।
ক্যাম্পাসের বহির্ভাগে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমে পরিচালনায় যুক্ত ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, 'গবিতে আমাদের কোনো শাখা নেই। ক্যাম্পাসের ভেতরেও কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে না। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতির অনুমতি দেয়, তাহলে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে।'
সম্প্রতি, 'গণ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক কালচারাল সোসাইটি' নামে একটি নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে, যা শিবিরের একটি কৌশলগত উদ্যোগ বলে অনেকে মনে করছেন। তবে সংগঠনটির আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাহবুব এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সংগঠন গড়ে তুলিনি। আমাদের সাথে বিভিন্ন ঘরানার যেমন: হানাফি, আহালেহাদিস, তাবলীগ জামাত, ইসলামী ছাত্র শিবির ও সাধারণ ধর্মভীরু শিক্ষার্থীরা কাজ করছে এবং করবে। ইসলাম প্রচার ও কুরআন-হাদিসের আলোকে দাওয়াতি কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য।'
লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ। যদি কেউ ক্যাম্পাসে দলীয় কার্যক্রম চালায়, তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তিনি আরও জানান, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এবং বাহিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে কোনো দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। এ বিষয়ে দ্রুত একটি নোটিশ জারি করা হবে।'