মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি: রাষ্ট্রের প্রস্তুতি ও আমাদের করণীয়

মঙ্গলবার, জুলাই ২২, ২০২৫
বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি: রাষ্ট্রের প্রস্তুতি ও আমাদের করণীয়

লেখক: ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম

গতকাল রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ গেল অন্তত ১৯ জনের। আহত হয়েছেন শতাধিক, যাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানকে নয়, গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। কোমলমতি শিশুদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই নির্মম বিপর্যয় আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতার এক নির্মম চিত্র তুলে ধরেছে।

কী ঘটেছিল সেইদিন?
আইএসপিআর জানিয়েছে, সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে। এটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর চীনা তৈরি এফ-৭ বিজিআই মডেলের একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। মাত্র ১২ মিনিট পরে, ১টা ১৮ মিনিটে, বিমানটি বিধ্বস্ত হয় মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনের সামনে। ভবনটি প্রজেক্ট-২ নামে পরিচিত, যেখানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলতো এবং ছুটির পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির কোচিং হতো।

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে একটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, পথচারী—অনেকেই হতাহত হন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের খুঁজে পাননি। বারবার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ছুটে গেছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দগ্ধদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও নিহত হন। আইএসপিআরের সর্বশেষ তথ্যমতে, নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ জন এবং আহত হয়েছেন ১৬৪ জন।

বাংলাদেশে এরকম দুর্ঘটনার ইতিহাস
এটি প্রথম নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে সামরিক ও বেসামরিক উভয় বিমানের বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত এক দশকে শুধু সামরিক প্রশিক্ষণ বিমানের কমপক্ষে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই হয়েছে চট্টগ্রাম, জেসোর ও তেঘরিয়া বিমানঘাঁটির আশপাশে। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের কক্সবাজারে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দুই পাইলট নিহত হন। ২০১৫ সালে বগুড়ায় একটি প্রশিক্ষণ বিমান কৃষিজমিতে বিধ্বস্ত হয়। এসব দুর্ঘটনার অনেকগুলোতে মানুষ হতাহত না হলেও বিমানের ক্ষয়ক্ষতি ও জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কোথায়?
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ হলো:
যশোর বিমান ঘাঁটি (BAF Base Matiur Rahman)
তেজগাঁও বিমানঘাঁটি (BAF Base Bashar)
চট্টগ্রামের কক্সবাজার বিমানঘাঁটি (BAF Base Zahurul Haque)
সিলেট ও পটুয়াখালীতে সাময়িক ঘাঁটি ব্যবহৃত হয় প্রশিক্ষণের জন্য
এসব কেন্দ্রের আশেপাশেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও, কখনো কখনো প্রশিক্ষণ বিমানগুলো মেইনটেনেন্স ফ্লাইট ও ফ্লাইং এক্সারসাইজের জন্য নগরাঞ্চলের পাশ দিয়ে চলাচল করে থাকে।

দুর্ঘটনা কেন ঘটে?
এই ধরনের দুর্ঘটনার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যেমন:
প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা যান্ত্রিক ব্যর্থতা
আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারানো
পাইলটের ভুল সিদ্ধান্ত বা প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি
জনবহুল এলাকার পাশে প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার অব্যবস্থা
বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণে উন্নয়ন হলেও, কখনো কখনো পুরনো ও অপ্রতুল যন্ত্রাংশ ব্যবহার কিংবা পর্যাপ্ত ফ্লাইট সিমুলেশন না থাকার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যায়।

কীভাবে দুর্ঘটনা রোধ করা যায়?
১. নগরীর বাইরে নিরাপদ অঞ্চল নির্ধারণ: জনবহুল এলাকার পাশ দিয়ে প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে নির্ধারিত এয়ার জোনে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
২. সফটওয়্যার ও যান্ত্রিক আপগ্রেড: প্রশিক্ষণ বিমানের সফটওয়্যার ও যন্ত্রাংশ আধুনিকায়ন করতে হবে।
৩. ফ্লাইট সিমুলেটরের ব্যবহার: পাইলটদের আরও উন্নত সিমুলেটর ট্রেনিংয়ের সুযোগ বাড়াতে হবে।
৪. নিয়মিত পরীক্ষা ও মূল্যায়ন: প্রতিটি বিমান ফ্লাইটের আগে ও পরে নিরাপত্তা পর্যালোচনা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫. জনগণের সুরক্ষা নীতি বাস্তবায়ন: যেকোনো সামরিক কার্যক্রমের আশেপাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, জনবসতি থাকলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে গণ্য করে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে।

উপসংহার
এই দুর্ঘটনা একটি জাতীয় সংকেত। প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানবিক অবহেলা বা নীতিগত ত্রুটির কারণে জীবন বিপন্ন হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিঃসন্দেহে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান। আমরা শোকাহত, ব্যথিত এবং চরমভাবে উদ্বিগ্ন।

আমরা আশা করি, এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে, দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

আল্লাহ নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন, আহতদের দ্রুত সুস্থতা দান করুন এবং এই জাতিকে সব রকম দুর্যোগ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।


 ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
চেয়ারম্যান – বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র
চেয়ারম্যান – সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট
চেয়ারম্যান – ডেমোক্রেসি রিসার্চ সেন্টার (ডিআরসি)


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল