রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

হাসির ছবির পেছনে লুকিয়ে থাকা পথের গল্প

শনিবার, আগস্ট ২, ২০২৫
হাসির ছবির পেছনে লুকিয়ে থাকা পথের গল্প

আবুল খায়ের, ডিআইইউ প্রতিনিধি:

গুলশান-২, ঢাকার ধনাঢ্য, কর্পোরেট ও কাঁচচকচকে বাস্তবতায় মোড়ানো এক অভিজাত এলাকা। যেখানে মানুষের দিন কাটে ব্যস্ততায়, গাড়ির হর্ণে, আর নানান  ব্র্যান্ডের ভিড়ে। ঠিক সেই সাঁইসাঁই দুনিয়ার পাশেই, এক রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে খেলায় মেতে উঠেছে তিনজন শিশু। কারও গায়ে জামা নেই, কারও পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল, কেউবা শুধু একটা ছোট প্যান্ট পরে আছে, তবু যেন আনন্দে ভরা ছোট্ট একটা জগৎ।

আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম পাশেই। ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম হতবাক হয়ে, মুগ্ধ হয়ে, আর একটু বিষণ্ন হয়ে।
ছবির ফ্রেমে ধরলাম সেই মুহূর্ত।
ওরা থামেনি বরং ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কেউ হাসল, কেউ লজ্জা পেল, আবার খেলায় ফিরে গেল।
ছবি তোলার পর ওদের হাতে দিলাম ১০ টাকা করে। বললাম, “চিপস খাবে?”
টাকার বদলে ওরা যে হাসি ফিরিয়ে দিল, তা ঢাকার সবচেয়ে দামি কফিশপের এসপ্রেসো থেকেও অনেক বেশি দামী।

ওদের রাস্তাই ঘর, মাঠই জীবন
এই শিশুগুলো হচ্ছে ঢাকার পথশিশু। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (BIDS)-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখের মতো, যার অর্ধেকের বেশি রাজধানীতে বসবাস করে।
ওদের অনেকের জন্মের কোনো নথি নেই, স্কুলে যাওয়ার সুযোগ নেই, মাথার ওপর ছাদ নেই। কেউ ফুটপাথে ঘুমায়, কেউ রেলস্টেশনে, কেউবা মার্কেটের পেছনের কোণে।

গুলশান, বনানী, মতিঝিল, ফার্মগেট কিংবা কমলাপুরে আপনি প্রতিদিনই দেখতে পাবেন এদের,
কেউ বাদাম বা পানি বিক্রি করে, কেউ ফুল বা টিস্যু বিক্রি করছে, কেউবা ট্র্যাফিকে দৌড়াচ্ছে ৫ টাকার আশায়।

হাসির ভেতরে লুকিয়ে আছে কষ্টের গল্প
এই শিশুগুলোর মুখে হয়তো আপনি হাসি দেখবেন। কিন্তু সেই হাসির আড়ালেই লুকিয়ে আছে ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা আর অবহেলার এক দীর্ঘ ইতিহাস।
রাষ্ট্র যখন জন্মনিবন্ধন দেয় না, স্কুলে ঢোকার আগে ইউনিফর্ম চায়, আর মানুষের চোখে যখন ওরা “অস্বস্তিকর” তখন এই শহরই ওদের কাছে হয়ে ওঠে নিষ্ঠুর।
তবুও বৃষ্টির জল দিয়ে খেলা করে ওরা, যেন সেটাই ওদের সুখের সাম্রাজ্য।

‘শিশু অধিকার ফোরাম’-এর তথ্যমতে, পথশিশুদের অধিকাংশই শিক্ষার বাইরে। অনেকেই শিশু শ্রমে নিযুক্ত, কেউ কেউ মাদক ও অপরাধচক্রে জড়িয়ে পড়ে।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ওরা পড়তে চায়, খেলতে চায়, স্বপ্ন দেখতে চায়। যদি পায় একটু সহানুভূতি, একটু হাত ধরার কেউ।

আমরা কী করতে পারি?
এই ছবি কিংবা গল্পগুলো কেবল সহানুভূতির জন্য নয় এগুলো আমাদের বিবেকের দরজায় কড়া নাড়া।
হয়তো আমরা সবার জীবন বদলাতে পারব না। কিন্তু কেউ একজন যদি প্রতিদিন এক শিশুর মুখে হাসি ফোটায়, সেটাও হবে সমাজ বদলের শুরু।
কোনো রেস্টুরেন্ট যদি খালি পেটের শিশুকে খাওয়ায়, কোনো ব্যক্তি যদি স্কুলে পাঠানোর দায়িত্ব নেয়। তবেই এসব ছবির পেছনের গল্প বদলে যেতে পারে।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল