মোঃ মুরাদ হোসেন:
কালোজিরা প্রাকৃতিকভাবে এমন এক উপকারী উপাদান, যার মধ্যে অজস্র ঔষধিগুণ বিদ্যমান। প্রতিদিন সীমিত পরিমাণে কালোজিরা গ্রহণ করলে তা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতেও সহায়ক হতে পারে। কালোজিরার বীজে প্রায় ১০০টিরও বেশি সক্রিয় রাসায়নিক উপাদান রয়েছে।
কালোজিরার মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও তাদের কার্যকারিতাঃ
➤জিঙ্ক: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ঘা দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে; ত্বক, চুল ও প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি
➤থাইমোকুইনন: এটি কালোজিরার সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রধান সক্রিয় উপাদান। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কোষের ক্ষয় রোধ করে।ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমায়।
➤প্রোটিন: দেহের কোষ গঠন ও মেরামতে সহায়তা করে। হরমোন ও এনজাইম তৈরিতে প্রয়োজন,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেশি গঠনে সহায়ক
➤থাইমোহাইড্রোকুইনন: নিউরোপ্রটেক্টিভ গুণ রয়েছে — মানসিক রোগ, পারকিনসনস ও আলঝেইমার প্রতিরোধে সহায়ক।
➤ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁত মজবুত করে, স্নায়ু সংকেত আদান-প্রদান ও পেশি সংকোচনে সাহায্য করে, রক্ত জমাট বাঁধাতে প্রয়োজন
➤নাইজেলোন: শ্বাসপ্রশ্বাসে সহায়ক, হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসে কার্যকর।
➤আয়রন: রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক, রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধ করে
➤ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড: হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল, বিভিন্ন সংক্রমণ রোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
➤পটাসিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখে, পেশির কাজ ও স্নায়ু সংকেতে সহায়তা করে
➤ভিটামিন B1: শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে (কার্বোহাইড্রেট ভাঙে),স্নায়ুতন্ত্র ঠিক রাখে, মনোযোগ ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
➤ভিটামিন B2: কোষে শক্তি উৎপাদন করে, ত্বক ও চোখ সুস্থ রাখে, এনজাইম কার্যক্রমে সহায়তা করে
➤ভিটামিন B3: হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে
, ত্বক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতাঃ
➤রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ থাইমোকুইনন ও অন্যান্য ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে।
➤হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নয়নঃ ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
➤মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ নি উরোপ্রটেক্টিভ উপাদানগুলো স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, স্ট্রেস কমানো এবং মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।
➤ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ কালোজিরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
➤ওজন নিয়ন্ত্রণঃ ফ্যাট মেটাবলিজম বাড়ায় এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
➤অ্যান্টি-ক্যান্সার গুণঃ থাইমোকুইনন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি থামাতে পারে – বিশেষ করে স্তন, কোলন ও ফুসফুস ক্যান্সারে।
➤শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিতে উপকারীঃ নাইজেলোন ও অন্যান্য উপাদান শ্বাসনালী প্রশস্ত করে।
➤ত্বক ও চুলের যত্নেঃ কালোজিরার তেল একজিমা, ব্রণ, চুল পড়া রোধে কার্যকর।
সতর্কতাঃ অতিরিক্ত সেবন ক্ষতির কারণ হতে পারে। গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করুন। শিশুদের ক্ষেত্রে মাত্রা নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
লেখক: মোঃ মুরাদ হোসেন
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ,
হাবিপ্রবি, দিনাজপুর