অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রোববার দুপুরে শেষ হয়েছে। বৈঠক শেষে উভয় দেশের মধ্যে একটি চুক্তি এবং চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৈঠকটি শুরু হয়েছিল।
শনিবার দুই দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার। বৈঠক ঘিরে ছয় চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি রাখে দুই দেশ। এর মধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি, সাংস্কৃতিক বিনিময় নিয়ে সমঝোতা, দুদেশের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মধ্যে সমঝোতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে যৌথ গ্রুপ গঠন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া দুদেশের পণ্য ও সেবার মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই বৈঠকে দুদেশ সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তবে দুদেশের বাণিজ্য বাড়ানো এবং আন্তঃসংযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে ঢাকা সফরে রয়েছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী। বৈঠককে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতা, অর্থনীতি এবং অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে আলাপ করবে দুদেশ। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবে ঢাকা ও ইসলামাবাদ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ, বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানির প্রত্যাবাসন, সম্পদের হিস্যা, ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেওয়া বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা করা জরুরি বলে মনে করে ঢাকা। বিষয়গুলো বৈঠকে তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এক কূটনীতিক বলেন, দুদেশের প্রতিরক্ষা খাত, জঙ্গিবাদ দমন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি, সার্ককে আবারও সচল করাসহ সার্বিক বিষয় গুরুত্ব পাবে। দীর্ঘ সময় পরে দুই দেশের বৈঠক হতে যাচ্ছে। এটিকে সফল করতে চায় বাংলাদেশ।
সকাল ১০টায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার আগে তৌহিদ হোসেন ও ইসহাক দার একান্ত বৈঠকের কথা জানা গেছে। এরপর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ইসহাক দার নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বৈঠকের পর ইসহাক দারের সফর উপলক্ষে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছে সরকার। বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর তিনি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে বেশ কয়েকটি বৈঠকের কথা রয়েছে। ইসহাক দার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের বাসায় দেখা করতে যাবেন। রোববার রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইসহাক দার শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ইসহাক দারকে নিয়ে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার তৃতীয় সদস্য ঢাকায় এলেন। গত জুলাইয়ে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভী। গত বুধবার ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। ঢাকা সফরে ইসহাক দার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গেও তাঁর বৈঠক করার কথা রয়েছে। শনিবার বিকেলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে অভ্যর্থনার আয়োজন করে ঢাকায় দেশটির হাইকমিশন। এর ফাঁকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন ইসহাক দার।
একে