মোঃ বাঁধন হোসেন
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে ঘন কুয়াশা। ভোরের আলো ফুটতেই গাছপালার ডালে, সবুজ ঘাসে, ফোটা ফুলে আর শিক্ষার্থীদের হেঁটে যাওয়া রাস্তায় এখন শীতের আগমনী বার্তা স্পষ্ট।
উত্তরাঞ্চলের এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব ছবিতে রূপ নিয়েছে। অল্পদিনেই ক্যাম্পাসের খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে দূর থেকে তাকালে দেখা যাবে—অলস ভোরে হালকা কুয়াশায় ঢেকে গেছে একাডেমিক ভবনগুলো, রাস্তার দুইপাশে সারি সারি গাছ, আর ছাত্রছাত্রীদের হাঁটার পথ। মনে হবে যেন পুরো প্রকৃতি সাদা চাদরে মোড়ানো।
সকাল বেলা অনেকেই হাঁটতে বের হন, তারা প্রত্যক্ষ করেন শীতল কুয়াশার স্পর্শ। কারও হাতে ধোঁয়া ওঠা চা, কারও চোখে শীতের আনন্দ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, হাবিপ্রবির শীত নাকি একেবারেই আলাদা।
শীতে শিক্ষার্থীরা আড্ডা দেন গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে। কেউ আবার খেলার মাঠে হালকা ব্যায়াম করেন। বিকেলে বাঁশেরহাটে গরম গরম পিঠা বাড়তি আনন্দ যোগ করে শীতের মৌসুমে।
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম বলেন, “ভোরবেলা মাঠে দাঁড়ালে মনে হয় প্রকৃতি যেন নতুন রঙে সেজেছে। এখনই পাতা থেকে অনেকটা ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির পড়ছে, ঘাসে হাঁটলে জুতো ভিজে যাচ্ছে। এরকম পরিবেশ আমাদের পড়াশোনার ক্লান্তি দূর করে দেয়।
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও গবেষণার মাঠে এখন নতুন ভিন্নতা দেখা যাবে। শাক-সবজি, গমসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ নিয়ে গবেষণা করছেন কৃষি অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শীত মানেই চা-এর দোকানগুলো জমজমাট। বাঁশেরহাটে চায়ের দোকানে ভিড় লেগেই থাকে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে কিংবা সকালে উঠে গরম চা হাতে নিয়ে বসে যায়। সঙ্গে থাকে পিঠা, বিস্কুট আর আড্ডার ঝড়।
শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও বেড়ে যায়। সংগীত ও নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা নানা আয়োজন করে। কবিতা পাঠ, নাটক, সংগীতানুষ্ঠান—সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত আবহে। শান্ত পরিবেশ, কুয়াশায় ঢাকা নির্জনতা, আর ঠান্ডা আবহাওয়া—সব মিলিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব জানান, “গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে পড়াশোনায় মন বসাতে কষ্ট হয়। কিন্তু শীতে সকালে উঠে লাইব্রেরিতে বসলে অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে। চারপাশ নীরব থাকে, শুধু বইয়ের পাতার শব্দ শোনা যায়।”
শীতকাল আসলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। পিঠা উৎসব, বনভোজন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস সরব হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা তাতে অংশগ্রহণ করে আনন্দে মেতে ওঠে।
উত্তরাঞ্চলের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকাল শুধু আনন্দ নয়, গবেষণার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ সময়। কৃষি অনুষদের গবেষকেরা শীতকালীন সবজি, ফসল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালান। ক্যাম্পাসের কৃষি খামার, গবেষণাগার ও মাঠে শিক্ষার্থীরা কাজ করেন শীতের ভোর থেকে।
ক্যাম্পাসের আশেপাশের গ্রামবাসীরাও এই শীত উপভোগ করেন। ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, হাবিপ্রবি এলাকার শীত তাদের জন্য আশীর্বাদ ও কষ্ট দুটোই বয়ে আনে।শীতকালে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, বাইরের দর্শনার্থীরাও আসেন ক্যাম্পাস দেখতে। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে অনেকেই ভ্রমণে আসেন। ক্যাম্পাসে ছবি তোলা—সবকিছুই ভ্রমণপ্রেমীদের টানে।
শীত হাবিপ্রবির জন্য শুধু আবহাওয়ার পরিবর্তন নয়, বরং এক রূপকথার মতো মৌসুম। সকালবেলা কুয়াশায় ঢাকা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, প্রকৃতি যেন এক বিশেষ আয়োজন করেছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্থানীয় মানুষ—সবাই এই শীতের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।
একে