সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে আজেনা বেগম (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
আজেনা বেগম সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের পশ্চিম বেলকা গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী। তার শরীরে অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক।
তিনি গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার খুব খারাপ অবস্থায় আজেনা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তাঁর শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ ছিল। এ ছাড়া রোগীর রক্তচাপ কমে গিয়েছিল এবং শ্বাসকষ্ট ছিল। পরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ জানান, ওই নারীর তিনটি ছাগল ছিল। এর মধ্যে একটি ছোট ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছাগলটির অবস্থা বেগতিক দেখে ৩০ সেপ্টেম্বর জবাই করা হয়। এ সময় আজেনা বেগমের হাতের আঙুলে ক্ষত হয়। পরে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের পরামর্শ নেন তিনি। এতে কাজ না হলে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন।
তবে রোববার এক চিঠিতে গাইবান্ধার সিভিল সার্জনের কার্যালয় জানিয়েছে, এ জেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যু হয়নি। সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের এক নারী অ্যানথ্রাক্সে মারা গেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওই রোগী আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন।
ডা. দিবাকর বসাক জানান, ১ অক্টোবর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বেলকা ইউনিয়নে মোট ১৬ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। রোববার নতুন কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে আসেননি।
অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কে সুন্দরগঞ্জে গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। সুন্দরগঞ্জ বাজারের বিসমিল্লাহ ফ্রেশ মিট হাউসের কর্ণধার নয়া মিয়া বলেন, এক সপ্তাহ ধরে গরুর মাংস বিক্রিতে ধস নেমেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গরু জবাই করা হলেও ক্রেতা মিলছে না। উপজেলা শহরের সাত মাংসের দোকানে দিনে তিন-চারটি গরু জবাই হচ্ছে, যা আগে ছিল কমপক্ষে ১০টি।
রোববার রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবদুল হাই সরকারের সই করা চিঠিতে জানানো হয়েছে, সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে দুটি মনিটরিং টিম করা হয়েছে। ছয় সদস্যের মনিটরিং টিম উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তদারকি করবে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিশেষ কার্যক্রম
গবাদি পশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় রোগটির বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তরটি জানায়, গবাদি পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াতে সক্ষম ব্যাকটেরিয়াজনিত জুনোটিক রোগ অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে বিভিন্ন জেলায় টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, পথসভা, লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আক্রান্ত এলাকায় অসুস্থ পশু জবাই প্রতিরোধ, মৃত পশু সঠিকভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং দ্রুত টিকার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘ওয়ান হেলথ’ কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে সচেতনতা কার্যক্রম চলছে।
রংপুর ও গাইবান্ধাকে অ্যানথ্রাক্সে বেশি আক্রান্ত এলাকা চিহ্নিত করে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লাখ টিকা সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছে, যার মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধায় যাবে ২০ লাখ। রোগের উৎস অনুসন্ধানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উচ্চ পর্যায়ের টিম গঠন করেছে। শিগগির আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে তারা প্রতিবেদন দেবে।
একে