মুহা: জিল্লুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত ও অসীম ক্ষমতাধর ব্যক্তি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে এক প্রজ্ঞাপনে তাঁর এই বদলি আদেশ জারি করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আব্দুল হামিদ স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদকে বদলি করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, মেহেরপুরে মেডিকেল অফিসার পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ আদেশ জনস্বার্থে জারি করা হয়েছে। বদলিকৃত কর্মকর্তাকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দায়িত্বভার হস্তান্তর করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্বভার হস্তান্তর না করলে ষষ্ঠ দিন থেকে তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত এক ব্যক্তি জানান, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ডাক্তার ফয়সাল আহমেদের এক খালা শাশুড়ী সচিবালয়ে সহকারী সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদটি দীর্ঘদিন ধরে বাগিয়ে রাখেন। এ সময় তিনি সিভিল সার্জনসহ হাসপাতালের কোন কর্মকর্তাকে মূল্যায়ন করতেন না। অফিস না করে সকাল থেকেই তিনি নিজের বাসায় চেম্বারে রোগী দেখতেন। এরপর সময় কাটাতেন নিজের মালিকানাধীন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সামনে প্রতিষ্ঠিত হার্ট ফাউন্ডেশন নামের হাসপাতালে। নিজের প্রয়োজন ছাড়া তিনি হাসপাতালে আসতেন না। সদর হাসপাতালের কতিপয় স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে রোগী ভাঙ্গিয়ে তিনি নিজের হাসপাতালে নিয়ে যেতেন। কেউ তার এই অনিয়মের প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না। ভয়ে সিভিল সার্জন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতেন না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, একবার কোনো রোগী ডাক্তার ফয়সালের মালিকানাধীন হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করাতে পারলে তাকে একরকম নিঃস্ব করে ছেড়ে দেয়ান আভিযোগ আছে। সদর হাসপাতাল সহ সারা জেলা ব্যাপী থাকা তার দালালদের মাধ্যমে তিনি রোগী ভাগিয়ে নিজের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এরপর নানা কৌশলে রোগীর লোকজনকে জিম্মি করে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। তার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এদিকে স¤প্রতি ডা. ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ অনুপস্থিতি, সিভিল সার্জনের সঙ্গে অসদাচরণ এবং বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের বায়োমেট্রিক হাজিরা রেকর্ডে দেখা গেছে, গত তিন মাসে তিনি ৫০ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. মো. আবদুস সালামের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর ওই ঘটনায় ৫ অক্টোবর সিভিল সার্জন মহাপরিচালকের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এর পরদিন ৬ অক্টোবর সদর হাসপাতাল থেকে অপসারিত স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে হাসপাতাল সম্মুখ সড়কে মানববন্ধন ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় ঘেরাও করান ডা. ফয়সাল, যা নিয়ে জেলা জুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফয়সাল আহমেদের বদলি হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন সাতক্ষীরাবাসি।
এমআই