রাজধানীর আমিন বাজার ব্রিজ। পায়ে হাঁটা লোকজনের দীর্ঘ সারি। নানা বয়সী নারী-পুরুষ প্রত্যুষেই সার ধরেছে রাজধানী অভিমুখে। তবে বেশিরভাগের বয়স বিশ থেকে চল্লিশের কোঠায়। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে রাজধানী মুখে ছুটছে এসব আদম সন্তান।
লক ডাউনের কারনে গণপরিবহন বন্ধ। চলছে শুধু রিক্সা, সিএনজি, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য ছোটখাটো যান। এসব যানে স্বাভাবিকের চেয়ে বহু গুণ ভাড়া গুণে বাধ্য হয়ে ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু কেন? কেন এত টাকা ভাড়া বেশি দিয়ে দুর্ভোগ পোহায়ে ঢাকায় ফিরছেন? লকাডাউন উঠলে ৫ তারিখের পরে ফিরলে হত না? আমার এমনই প্রশ্ন ছিল তাদের কাছে।
সংবাদ সংগ্রহে ছিলাম গাবতলি-আমিন বাজার এলাকায়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষেরই জবাব ছিল রুঢ় ভাষায়। কথাবার্তায় ছিল প্রচন্ড ক্ষোভ। এমনকি দু-চারজন মুখ খারাপ করেছেন, গালমন্দ করছেন। একজন তো আমাদের ক্যামেরা জার্নালিস্ট জাপান সুমনের দিকে তেড়েই আসলেন। মারমুখী লোকটা পরে পুলিশের ডান্ডার ভয়ে বিপরীতমুখী হলেন। আরেক জন বয়স্ক নারী মুখ খারাপ করে ভয়ঙ্কর একটা গালি আওড়ালেন যা ভাষায় প্রকাশের মত না। এবারও অবশ্য ভুক্তভোগী সুমন। বৃদ্ধাটি ওর পিঠে ধাক্কা দিয়ে বললেন,.............না লিখতে পারলাম না। তবে গালির উদ্দেশ্য কিন্তু সুমন বা আমি-আমরা ছিলাম না।
আমার ১৫/১৬ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে খবর সংগ্রহে গিয়ে মানুষের মাঝে কখনও এমন তীব্র ক্ষোভ দেখিনি। যতটুকু বুঝতে পারলাম আগামীকাল অর্থাৎ রবিবার থেকে গার্মেন্টস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। লকডাউন চলমান থাকলেও ব্যবসায়ীরা দেনদরবার করে গার্মেন্টস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিকই আদায় করে নিয়েছেন। কথা দিয়েছিলেন ঢাকার বাইরে যাওয়া কর্মীদের লকডাউন ওঠার আগে ফিরিয়ে আনবেন না। শুধুমাত্র ঢাকায় কারখানার আশপাশে অবস্থানকারীদের নিয়ে গার্মেন্টস চলবে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
মালিকরা বলে দিয়েছেন রবিবার এসে জয়েন না করলে চাকরি থাকবে না। তাই বাধ্যহয়ে লকডাউনের মধ্যেই পায়ে হেঁটে, রিক্সায় চড়ে, সিনএনজি করে যান পাল্টিয়ে চার পাঁচগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন অসহায় এই মানুষগুলো। এটাই তাদের রাগ বা ক্ষোভের কারণ।
কারো কারো পাল্টা প্রশ্ন গার্মেন্টস খুলছেন, কিন্তু বাস তথা গণপরিবহন নাই কেন? আমরা আসব ক্যাম্নে? আমরা লা জবাব। উত্তর যে আমাদেরও জানা নেই।
ছোটবেলায় পড়েছি, ঝিকে মেরে বউকে শেখানো। তাদের গালিও কি আসলে তেমনি? রাস্তায় থাকা পুলিশকে দিতে পারে না ডান্ডা খাওয়ার ভয়ে। গোবেচারা গণমাধ্যম কর্মীদের দিলে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কোনটাই হবে না। আমরাও বুঝি গালিটার আসল উদ্দেশ্য বা বিধেয় কোনটাই আমরা না। তাই মুখ বুজে থাকি।
আর সত্যিই বলছি, বুড়ি-মা-টা কিন্তু আমাদেরকে গালি দেননি। তিনি দিয়েছেন.......। বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে তেজপাতা।
লেখা আমার, মন্তব্য যার তার। স্বাস্থ্যবিধি মানি, নিরাপদ থাকি।