শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ডাক্তারের কাছে গেলেই এই টেস্ট সেই টেস্ট!!

সোমবার, আগস্ট ৯, ২০২১
ডাক্তারের কাছে গেলেই এই টেস্ট সেই টেস্ট!!

ডা. মারুফ রায়হান খান :

শুধু হেঁচকির সমস্যায় ২২০০ টাকার টেস্ট!!!
আমার কাছে ৬৫ বছর বয়স্ক একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী-সদস্য এসেছিলেন। তার সমস্যাটি ছিল বারংবার শুধু হেঁচকি উঠছে, কিছুতেই কমে না৷ আমি উনার ব্লাড প্রেশার মেপে দেখি ১৯০/১১০ মিমি মার্কারি। অস্বাভাবিক বেশি৷ জিজ্ঞেস করলাম, আগেও কি আপনার ব্লাড প্রেশার বেশি ছিল? তিনি জানালেন, আগেও মাঝেসাঝে বেশি থাকতো তবে ওষুধ খেতেন না। আমি এখনই একটি ইসিজি করিয়ে ফেলতে বলি। কয়েক মিনিট পর তিনি ইসিজি নিয়ে এলেন। দেখলাম হার্টের একটা অংশ ঠিকমতো ব্লাড সাপ্লাই পায় না৷ অর্থাৎ হার্টের অসুখ। উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের অসুখকে ফোকাস করে আরও কয়েকটি টেস্ট করতে দিলাম, যেগুলোতে সাধারণত এই ধরনের রোগীদের আরও কিছু সমস্যা চলে আসে।
তিনি পরদিন বেশ প্রফুল্ল মনেই আমার কাছে এলেন। তার কারণ ওষুধ খেয়ে কিছুক্ষণ পরেই তার হেঁচকি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আল্লাহর রহমাতে৷ আর হয়ওনি পরে। কিন্তু হাতে করে তিনি যেসব রিপোর্ট নিয়ে এসেছিলেন তা আমাকে খুব একটা প্রফুল্ল করতে পারেনি। খালিপেটে এবং খাবার দুই ঘন্টা পর তার ব্লাড সুগার অনেক বেশি৷ ডায়াবেটিস ধরা পড়ল। রক্তে চর্বির মাত্রাও বেশ বেড়ে গেছে। হাইপারলিপিডেমিয়া ধরা পড়ল। কিডনি পয়েন্টটাও বেশির দিকে।
তিনি আমার কাছে এসেছিলেন শুধু হেঁচকি নিয়ে। কিন্তু তার এখন ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ, হাইপারটেনশান, ডায়াবেটিস এবং হাইপারলিপিডেমিয়া ধরা পড়ল। এই যে রোগগুলো ধরা পড়ে গেলো, এতে লাভ হলো কার? এই রোগগুলো বেশিরভাগক্ষেত্রেই কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ করে না। কিন্তু যখন লক্ষণ প্রকাশ করে তখন দেখা যায় অনেক দূর প্রোগ্রেস হয়ে গিয়েছে, নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়ে গেছে। আর রোগগুলো আগেভাগে ধরা গেলে, সে অনুযায়ী চিকিৎসা ও লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। দীর্ঘদিন সুস্থ জীবন পার করা যায় আল্লাহর রহমাতে।
"শুধু হেঁচকি নিয়ে এসেছে এই রোগীকে ৫টা টেস্ট দিয়ে দিলো! ২২০০ টাকার টেস্ট দিয়ে দিলো শুধু হেঁচকির সমস্যার জন্য! এজন্যেই মানুষ ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না! পাড়ার ফার্মেসিওয়ালার কাছ থেকে ওষুধ কিনে খাওয়াই ভালো।"
আমি একবার একটা পোস্ট করেছিলাম, ফার্মেসিওয়ালার কাছ থেকে ওষুধ কিনে খেলে কীরকম ক্ষতি ও সর্বনাশ হতে পারে। সেখানে আমাকে অনেকেই নেতিবাচক কমেন্ট করলেন যে, ডাক্তারের কাছে গেলেই এই টেস্ট সেই টেস্ট। গেলেই কসাইয়ের মতো গলা কাটা শুরু করে। আর ফার্মেসিওয়ালার কাছে গেলে ৫০০-৬০০ টাকার ওষুধ দিয়ে দেয় সেটাই ভালো।
আচ্ছা এই রোগীটাকে যদি আমি আজকে 'এই এই হতে পারে' সন্দেহে কিছু টেস্ট না করাতাম তাহলে তার এই সমস্যাগুলো কি ধরা পড়তো? ভিতরে ভিতরে তার এই সমস্যাগুলো বেড়ে বেড়ে হার্ট এটাক বা স্ট্রোক বা কিডনি ফেইলিওর বা অন্ধত্বের মতো ভয়ানক অবস্থায় চলে যেতে পারতো। সেটা কি ভালো হতো? নাকি রোগ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করাটা বেশি ভালো?
ও? আমার লাভ? তা তো অবশ্যই আছে। আমার রোগী যখন বলে স্যার আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনার জন্য অনেক দু'আ করি--সেটাই লাভ। নাহ, কমিশন নিই না আমি, সেই লাভ আমার নেই। হ্যাভ আ রিলাক্স।
বি.দ্র. আমাদের টেক্সট বইগুলোতে যে পরিমাণ টেস্ট করাতে বলে, আমরা এই দেশের ডাক্তাররা তার অর্ধেকও বোধহয় করতে দিতে পারি না রোগীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে। যেগুলো রোগ ধরার জন্য বা কারণ বোঝার জন্য বা প্রগ্নোসিস দেখার জন্য লাগবেই লাগবে শুধু সেগুলোই করতে দিই। আর হ্যাঁ, কিছু অসৎ লোক সর্বপেশায় সর্বকালে সর্বদেশেই ছিল এবং আছে। যাচাইয়ের দায়ভার তার তার।

লেখক : 
ডা. মারুফ রায়হান খান
৩৯ তম বিসিএস
মেডিকেল অফিসার, মেডিসিন বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল




Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল