সর্বশেষ সংবাদ
মো. মাইদুল ইসলাম, সময় জার্নাল প্রতিবেদক : 'দেখ তাসিব, আম গাছটায় কত মুকুল এসেছে? দেখতে কত সুন্দর লাগছে'! বরকত মিলনায়তনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সোনালী মুকুলের মুগ্ধতায় থমকে দাঁড়ায় গনিত বিভাগের দুই শিক্ষার্থী হাফসা ও তাসিব। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও তারা এসেছে ফরম পূরণের কাজে। বসন্তে ফাকা ক্যাম্পাসে এসে আমের মুকুলের এমন সৌন্দর্যে মুগ্ধ তারা।
ক্লাস রুমের বোর্ডের দিকে তাকিয়ে ক্লাস করার বদলে , ক্লাস করতে হচ্ছে অনলাইনে স্ক্রিনে তাকিয়ে! করোনার ভয়াল থাবায় থমকে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
কার্যক্রম। তবে কণকণে শীতের পরে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মেই। ঋতুরাজের আগমনে শীতের রিক্ততা ভুলে শিমুল-পলাশ, আমের মুকুল ও অন্যান্য ফুলসহ কুকিলের কুহু ডাক বসন্তের এই রুপ বিমোহিত করছে মানুষকে। তবে বসন্তে প্রকৃতিতে এ নজরকাঁড়া রুপ ইট-পাথরের রাজধানীতে দেখা মেলা ভাঁড়।
এদিক থেকে ভিন্ন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস। ছোট এই ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফল গাছ। বাহারি ফুলের সাথে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালী আমের মুকুল, কুকিলের ডাক ও শোনা যায় এ ক্যাম্পাসে। সব মিলিয়ে বসন্তে অপরূপ সৌন্দর্যের স্থানে রুপ নেয় তিতুমীরের প্রাঙ্গন।আমের মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে তিতুমীর কলেজ।
আমের মুকুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে কবি মোহাম্মদ ইরফান লিখেছেন,
'মন জুড়ানো, খেই হারানো' 'ধ্যান ভাঙ্গানো ঘ্রাণ, গাছের দু-কূল' 'আমের মুকুল জুড়িয়ে দেয় প্রাণ!' কবির ভাষার মত বসন্তের আগমনে সোনালী আম্রমুকুলের সৌন্দর্য ও মুহু মুহু ঘ্রাণে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রাঙ্গনে।
তিতুমীর কলেজের বরকত মিলনায়তনের সামনে, মেয়েদের হলের সামনে, কর্মচারীদের বাসভবনে, বেলায়েত চত্বরে রয়েছে অনেকগুলো আম গাছ। প্রত্যেকটি গাছের ডালগুলোতে ধরেছে অজস্র স্বর্ণালি মুকুল।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল । চঞ্চল মৌমাছি
গুঞ্জরি গায় , বেণুবনে মর্মরে ক্ষিণবায় ’ ।
ভরা ফাল্গুনে এখন আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে সব আমগাছ। সোনালী মুকুলের মাতাল করা মৌ-মৌ ঘ্রাণ তিতুমীরের বাতাস জুড়ে। মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণে ছুটে আসছে মৌমাছির দল, শোনা যায় ভ্রমরের গুঞ্জনও।
ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও ইনকোর্স-টেস্ট পরীক্ষা ও ফরম পূরণ সহ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে আসছে বেশ কিছু শিক্ষার্থী। বসন্তে তিতুমীর ক্যাম্পাসে ফোঁটা বাহারি ফুল, বসন্তের ঝরঝরে বাতাসে আম্রমুকুলের গন্ধ আর ফুলে-ফুলে ভ্রমর-মৌমাছির ওড়াওড়ির দৃশ্য সত্যিই নজরকাড়া মুগ্ধতা ছড়ায় ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীদের।
ক্যাম্পাসের পাশে থাকার সুবাধে মন ভালো করার জন্যেই ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাফান তাসনিম রিয়া জানান,' বসন্ত আশার পর ক্যাম্পাসের রুপ বদলে গেছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর মিলনায়তনের সামনের আম গাছটার আমের স্বর্ণালি মুকুলগুলো চোখে পড়ে। বেলায়েত চত্বরে মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পরে। মুকুলগুলোর উপর আবার মৌমাছি দল বেধে উড়ছে। সব মিলিয়ে উপভোগ করার মত একটা পরিবেশ।
গ্রামের বাড়ীতে থাকতে বসন্তে এমন দৃশ্য অহরহ দেখলেও ঢাকায় আসার পর সব জায়গায় এর দেখা মেলে না। তাই সময় পেলেই ক্যাম্পাসে যাই বসম্ত উপভোগ করতে।
তবে আক্ষেপে পুড়ছে গ্রামে থাকা শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর বসন্তকে বরণ করে নেয় তিতুমীরিয়ানরা। তারপর ক্যাম্পাসে উপভোগ করে পুরোটা বসন্ত। তবে এ বছর প্রেক্ষাপটটা সম্পুর্ণ আলাদা। অনেকেই গ্রামে রয়েছে। তারা ক্যাম্পাসে এসে বসন্তের এ নজরকাঁড়া সৌন্দর্য উপভোগ ও বসন্তের ঝরঝরে বাতাসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও দিতে পারছে না। এই সুযোগে প্রকৃতি সেজেছে অপরুপ সাজে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওসিফ মাইমুন বলেন, 'এবারও ফুল ফুটেছে। দখিন হাওয়ার গুঞ্জরণও লেগেছে প্রতিটি মুকুলের থোকায়। যা বাঙ্গালিদের মনে নিরানন্দতা। ক্যাম্পাসের প্রতিটি অঙ্গন রঙিন হয়েছে প্রকৃতির সবুজ সাজে। তবে ভয়াল করোনা থাবায় এবারের বসন্ত একেবারে ফেকাসে মনে হচ্ছে। শীতের আবরণে থাকা কৃষ্ণচূড়া বেরিয়াছে তার খোলস ছেড়ে। ক্যাম্পাসের কোকিল বিরহের সুর তুলে যাচ্ছে। এটি কোন ভাবেই আমাদের কাম্য ছিল না। সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা থাকবে আবারও পৃথিবী সুস্থ হোক। ফের বছর কলেজের শিক্ষার্থী, নানা সাজে বসন্ত বরণ করবে বলেই আসা করছি'।
গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান শোভন বলেন, 'সবার জীবনে নাকি বসন্ত আসে না। কথাটি প্রতিবার শীতের শেষে মিথ্যা প্রমানিত হলেও এইবার কিন্তু অনেকেই কথাটির মর্ম বুঝতেসে। এইতো সবে কয়েকদিন হলো শীত চলে গেলো। কনকনে শীতের মধ্যে সবাই যে একটু উষ্ঞতা খুজে। বসন্ত এই বুঝি সেই উষ্ঞতার রুপ ধরে আসে। কিন্তু এই বসন্ত উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়বা কয়জনের।
সরকারী তিতুমীর কলেজ যে বসন্তের আগমনে সেজেছে তার পরিপূর্ণ রুপে। কিন্তু পরিপূর্ণতা কি পেয়েছো আদো! কৃষ্ণচূড়া, জিনিয়া, থেকে শুরু করে আমের মুকুলেও যে একবিন্দু কৃপনতা করে নি তার রুপ চেনাতে। কিন্তু অইযে একটা অপূর্নত থেকেই যায়। গেলো বছরেও বসন্তের এই অপূর্নতা ছিলো না। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবায় সবকিছুই যেখানে উলুট পালুট সেখানে বসন্ত উপভোগ করার ভাগ্য কয়জনেরইরা হয়েছে। প্রকৃতি সেজে আছে তার আপন রুপে কিন্তু অইযে একটাই অপূর্নতা।এইখানেই
যেনো প্রকৃতির আক্ষেপ। স্টুডেন্টদের সেই আনাগোনা, বড় ভাই ছোট ভাইদের সেই মিলনমেলা।কোথাও যেনো একটা শুন্যতা'।
সময় জার্নাল/
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল