বুধবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১
সুব্রত মণ্ডল
দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশকে ‘ক্ষুধা, দারিদ্র, স্বয়ং সম্পূর্ণ ’সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশকে উন্নয়নে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেন। তিনি দিন রাত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য কাজ করছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ বিরোধী পাকিস্তানপন্থীরাই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বাংলাদেশ যে স্বাধীন ব্যর্থ রাষ্ট্র তা প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু বিরোধী একটি বলয় তৈরি হয়। সেই বলয়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লড়াই করতে বাংলাদেশকে স্বাধীন বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীগোষ্ঠী যখন বুঝতে পারে বঙ্গবন্ধুকে কোনভাবে দমাতে পারা যাবে না, তখনই তারা বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলার নানান পরিকল্পনা হাতে নেয়।
খুনি খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে । বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থমকে যায় ।১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা লোভী খুনি স্বৈরশাসকরা দেশ পরিচালনা করে। এই একুশ বছরে বাংলার কোন উন্নয়ন হয়নি। ১৯৯৬ বাংলাদেশের মানুষ সমস্ত রক্তচক্ষুর উপেক্ষা করে শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রধান করেন। শেখ হাসিনাও বাবার মত দক্ষ হাতে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে পরিচালনা করেন। মানুষ আবার বঙ্গবন্ধুর মত সরকার শেখ হাসিনার সরকারে দেখতে পায় । বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ফের দুর্বার গতিতে চলতে থাকে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী সহ্য করতে পারেনি । বঙ্গবন্ধুর মত শেখ হাসিনাকেও মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রে নেমে পড়ে। ২০০০ সাল থেকেই নানা উপায়ে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে ।‘রাখে আল্লা মারে কে”র মত শেখ হাসিনাকে স্বয়ং পরম করুণাময় বাংলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালে বিএনপি জামাত সরকার প্রধান খালেদা জিয়ার পুত্রের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় মদদে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শেখ হাসিনার সভামঞ্চে গ্রেনেড হামলা চালায়।
১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করেন।শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। কিন্তু দেশী বিরোধী ষড়যন্ত্রের কাছে শেখ হাসিনা ২০০১ সালের অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচনে হেরে যায়। ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি জামায়াত সরকার গঠন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নে কয়েকদশক পিছিয়ে পড়ে।
২০০১ সালে খালেদা গঠিত সরকারে স্থান পায় বাংলাদেশ বিরোধী গোষ্ঠী ১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের গণ আদালতে দণ্ডিত জামায়েতের শীর্ষ নেতারা । এর মধ্যে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আরেকটি কালিমা লেপন করে । খালেদা পুত্র তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া হাওয়া ভবন খুলে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে। তারেক জিয়ার হাতে রাষ্ট্রীয় মদদে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।মুক্তি হান্নান, বাংলা ভাই, শাইয়খ আব্দুর রহমানের মত জঙ্গিরা বাংলাদেশ চষে বেড়ায়। ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা, ২১ গেনেড বোমা হামলা, সিলেটে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার হোসেনের উপর বোমালার ঘটনা ঘটে। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধ্বংস হয়ে যায়।
সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পে তারেক জিয়া প্রত্যক্ষভাবে কমিশন বাণিজ্য নেমে পড়ে। সরকার প্রধান খালেদা জিয়া হলেও সরকার চালাতো হাওয়া ভবন থেকে তারেক জিয়া। সরকারি কর্মকর্তাদের তারেক জিয়া ব্যবহার করেন। তার কথামত আমলারা ফাইল রেডি করত। যার ফলে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে বাধার সৃষ্টি হয়। বাংলার ইতিহাসে খাম্বা ব্যবসা, কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত । তারেক জিয়া কমিশন খেয়ে ২০০৩ সালে কানাডার কোম্পানি নাইকোর মত অদক্ষ সুনামগঞ্জের ছাতকের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রকে গ্যাস উত্তোলনে টেন্ডার দেয়। নাইকোর অদক্ষতার কারণে প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে ওই বছরের ২৪ জুন।
শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক ২০১৬ সালে বাপেক্স আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেন। এতে নাইকোর কাছে বাপেক্স ১১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশ সরকার ৮৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে ইকসিডে নালিশ করা হয়। এরকম কমিশন বাণিজ্যের নাম গ্যাটকো। ঢাকা ও চট্টগ্রামে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে `গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো)` ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। জরুরি ক্ষমতা আইনে করা মামলায় গ্যাটকো কোম্পানিকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের কমপক্ষে ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতির অভিযোগ করা হয়।
মামলা হওয়ার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের ১০ জুলাই খালেদা জিয়া, সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় দুদক।
এদিকে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর যতগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের মাধ্যমে কাজ দিয়েছে তারা সুনামের সাথে কাজগুলো সম্পন্ন করেছে। শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দক্ষতার মাধ্যমে এসব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে বিপ্লব ঘটেছে। যার মাধ্যমে শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরির যথার্তার প্রমাণ মেলেছে। শেখ হাসিনার একক নির্দেশনায় বাংলাদেশ আকাশ পাতাল জয় করতে সমর্থ হয়েছে।
যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান হিসেবে একুশ শতকের বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের দরবারে পৌঁছানোর জন্য দুর্বার গতিতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক বিশ্বনেত্রী বিদ্যানন্দিনী জননেনেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ তনয়া তার কাজের স্বীকৃতি দেশের শান্তিকামী মানুষ ভোটের ব্যালটের মাধ্যমে টানা তিন বার ক্ষমতায় বসিয়েছে। ভোট জয়টি দৃশ্যমান হলে আপামর জনতার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার মানুষ শেখ হাসিনাকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মাধ্যমে তাদের অন্তঃস্থল থেকে সৌহার্দ্যতা প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনা বাবা বঙ্গবন্ধুর মত অনেক উন্নয়ন বিশ্বের পরিকল্পনায় নেতা হিসেবে বিভিন্ন ফোরামে ধরণীকে রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ সুপারিশ করেছে। আলোচনার প্রয়োজনে শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর ভালবাসার স্বীকৃতিমূলক পুরস্কারের উদাহরণ দিতেই হয়।
জননেত্রী শেখ হাসিনা সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভ্যাকসিন হিরো’, ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’, ‘স্টেট ম্যান’, ‘ইস্টার অব ইস্ট’, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তাকে বিভিন্ন সময় সম্মানিত করেছে।
১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে পার্বত্য শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার দেয়।
১৯৯৯ সালে অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেছিলেন, জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনার উদ্যোগ ও নিষ্ঠা বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ক্ষমতার ওই মেয়াদেই জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ ( CERES) মেডেল প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালামের নামে প্রতিষ্ঠিত ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজরি কাউন্সিল-এর ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পান। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও পারস্পরিক সন্তোষজনক সম্পর্ক, নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ, নারী ও শিশু এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতায় অবদানের জন্য এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ওই বছরই আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয় ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন।
বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্ব দানের জন্য শেখ হাসিনা গ্লোবাল উইমেনস লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘গ্লোবাল সামিট অব ওমেন’ তাকে এ সম্মাননা দেয়।
মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হন শেখ হাসিনা। অসহায় মানুষগুলোর প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ (মানবতার মা) উপাধিতে ভূষিত হন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশীপ পদক পান। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকং ভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে এ দুটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
২০১৫ সালে শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দূরদর্শী পদক্ষেপে নেওয়ায় তাকে সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই বছরই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এমডিজি) অর্জনে বিশেষ করে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ২০১৯ সালে তাকে এ পদক দেওয়া হয়। নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করে।
টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)।
বিশ্বের বিভিন্ন নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট ও সম্মাননা পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যালবার্টা ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিবারেল আর্টস এ ভূষিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ প্রদান করে।
১৯৯৯ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে দেসিকোত্তামা ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে। শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। তাকে ওই সম্মাননা দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি, ২০০০ সালে ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস সম্মাননা প্রদান করে।
এছাড়া ১৯৯৯ পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক, ২০০৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ পদক, হেড অব স্টেট পদক, ২০১১ ও ২০১২ গ্লোবাল ডাইভার্সিটি অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৭ নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার পান।
খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি তাকে সনদ প্রদান করে।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও উন্নত সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে তার নেওয়া পদক্ষেপের বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেখে চলা অবদান সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। এসব কারণেই বাংলার শান্তিকামী খেটে খাওয়া মানুষ শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু দেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিশ্ব পরিমণ্ডলে তাকে বিশ্ব নেতায় দেখতে চায়।
লেখক: সাবেক সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব।
সময় জার্নাল/আরইউ