৪২তম বিসিএস পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের সবাইকে আন্তরিক
অভিনন্দন
জানাচ্ছি । উপজেলা এবং জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার- নার্স এবং সকল শ্রেণির কর্মচারীর সংকট চলছে । জনস্বার্থে, অর্থাৎ দেশের জনগণকে চিকিৎসা করার জন্য আপনাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে । এ ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য সরকারের নেই ।
আমাদের দেশের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি মানে, একটি মর্যাদাপূর্ণ সামাজিক পরিচয় । মাস শেষে নিশ্চিত বেতনপ্রাপ্তি । কিন্তু, ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর জন্য সরকার কাউকে চাকরি দেয় না । চাকরিদানের পিছনে সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য -- দেশের মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করা ।
২.
সরকারি কর্মকমিশন কাউকে চাকরির জন্য সুপারিশ করলে, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয় । এ দুটো ধাপ আপনাদের বাকী আছে । ধাপ দুটো সম্পন্নকরণে মাস ছয়েক সময় লাগতে পারে । তবে, জরুরী প্রয়োজনে, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার করার আগে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে । এক্ষেত্রে, যোগদানের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজা আদায় করতে হয় ।
কখন কী করতে হবে, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হবে । ডাক্তারদের বিভিন্ন ফেসবুকে পেজ থেকেও এগুলো জানা যাবে ।
যারা চাকরিতে যোগদান করতে যাচ্ছেন, তারা কমপক্ষে দুই বছর খুশী মনে গ্রামে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিন ।
চাকরির বিধানে লেখা আছে, একজন চাকরিজীবি সর্বক্ষণ চাকরিজীবি হিসাবে বিবেচিত হবেন, এবং সর্বক্ষণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন ।
৩.
একজন সরকারি কর্মকর্তাকে উত্তম পোশাক পরিধান করতে হয় এবং উত্তম আচরণের অধিকারী হতে হয় । সরকারি ডাক্তারগণকে পালাক্রমে বহির্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ এবং জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে হয় । স্বাস্থ্যশিক্ষা দান, হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ, অধীনস্থ কর্মচারীদের তত্ত্বাবধানসহ নানা দায়িত্ব পালন তার কর্মপরিধির অংশ । সরকার (অর্থাৎ, সরকারের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) জনস্বার্থে যে আদেশ দেয়, সেটা তাকে পালন করতে হয় ।
# সঠিক সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া, # পূর্ণ সময় অবস্থান করা, # সততা এবং দক্ষতার সাথে কাজ করা, # সেবাগ্রহীতাদের সাথে উত্তম আচরণ করা -- এগুলো একজন সরকারি কর্মচারীর মৌলিক বৈশিষ্ট্য । যার মাঝে এ সবগুলো গুণ আছে, তিনি সরকার এবং জনগণ উভয় কর্তৃক প্রশংসিত হন । আল্লাহও তাকে পছন্দ করেন । যার মাঝে এ গুণের ঘাটতি আছে, তিনি অযোগ্যতা বা অদক্ষতার জন্য শাস্তি পাওয়ায় অধিকারী হন ।
সরকারি স্থাপনা ব্যবহার করে প্রচণ্ড ব্যাথায় নীল হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে থাকা মানুষকে সুস্থ করে তোলার অধিকার (দায়িত্ব) দেওয়া হয়েছে আপনাদের । এ দায়িত্ব মহান দায়িত্ব । যারা এ কাজ করেন, তারা মহীয়ান ।
সরকারি চাকরি মানে, সরকারের চেয়ার টেবিলে বসে, সরকারের কাছ থেকে বেতন নিয়ে জনগণকে সার্ভিস দেওয়ার অবারিত সুযোগ । এই সুযোগ খুব কম মানুষই পায় । এই সুযোগকে যারা কাজে লাগায় না, তারা বড় বদনসিব ।
সরকারি চাকরি মানে, অফিস টাইমে সওয়াব কামাই করার চমৎকার সুযোগ । প্রতিটি উত্তম কথা, উত্তম পরামর্শ সদকার (charity) সমতূল্য । যত বেশি কথা, যত বেশি কাজ, তত বেশি সওয়াব । হার্ট অ্যাটাক, রোড অ্যাকসিডেন্ট এবং মারাত্মক শ্বাসকষ্টের রোগীকে সুচিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা -- তাকে প্রাণ দান করার শামিল ।
৪.
হতাশা এবং নৈরাশ্য জীবনকে কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলে । এই আপদকে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করতে দিবেন না । এই 'জীবনহীন ভাইরাস' জীবনকে তো খায়ই, ক্যারিয়ারকেও নষ্ট করে ।
চাকরি করতে এসে কারও সাথে বেপরোয়া আচরণ করা যাবে না, অহংকারে স্ফীত হয়ে অন্যকে হেয় করা যাবে না, জনগণের মুখ থেকে 'স্যার' সম্বোধন শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা যাবে না, ফেসবুকে ইচ্ছেমত স্ট্যাটাস দেওয়া যাবে না, ভদ্রলোকের সাথে মানানসই নয় -- এমন কোনো পোশাক পরা যাবে না । সরকারের কোনো নীতি, রীতি বা প্রজ্ঞাপনকে অবজ্ঞা করা যাবে না । ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ন্যায়সঙ্গত কোনো আদেশ অমান্য করা যাবে না ।
যারা কর্মে অবহেলা করে, মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করে, সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করে, উৎকোচ গ্রহণ করে, মানুষ তাদেরকে গালি দেয়, তাদের পিতামাতাকে গালি দেয়, তাদের শিক্ষকদেরও গালি দেয় । এরা অভিশপ্ত ।
যারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে পূর্ণ বেতন গ্রহণ করে, তারা চোর । এদের আয় উপার্জন অবৈধ ।
সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা সময় যদি সরকারকে দিতে না-পারেন, তাহলে এমন ব্যক্তির সরকারি চাকরিতে যোগদান করা উচিত নয় । অফিস সময়ে কাজ করতে গেলে যার মাথায় বাজ পড়ে -- এমন অলস মানুষকে সরকার চাকরিতে দেখতে চায় না ।