বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

ই-কমার্স সেক্টরকে বাঁচাতে হবে

শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
ই-কমার্স সেক্টরকে বাঁচাতে হবে

মুহাম্মদ আশ্রাফুল আলম ভূঁইয়া :

সাম্প্রতিক আলোচিত ইস্যু হল ইভ্যালীর প্রতারণা ও প্রতিষ্ঠানের মালিককে সস্ত্রীক গ্রেফতার। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রতারণা ও অর্থ-আত্মসাত মামলায় ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। যদিও তাদের এই গ্রেফতার রিমান্ডে এখানে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা কতটুকু তা বলা মুশকিল তবুও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলাটাই স্বাভাবিক।

যতটুকু জেনেছি ইভ্যালি মোটরসাইকেল, গাড়ি, মোবাইল ফোন, ঘরের সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্রের মতো ইত্যাদি উচ্চমূল্যের পণ্যে লোভনীয় ছাড় দেয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতে ‘সাইক্লোন’ (ঘূর্ণিঝড়), আর্থকুয়েক’ (ভূমিকম্প) ইত্যাদি নামে তারা ক্রেতাদের ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাকের মতো অত্যন্ত লোভনীয় অফার দেয়।

২০১৬ সালে প্রথমে অনলাইনে ডায়াপার বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন ইভ্যালীর সিইও রাসেল। ২০১৭ সালে এই ব্যবসা করতে গিয়ে বড় একটি অনলাইন প্লাটফর্মের কথা চিন্তা করেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন দেশীয় ই-কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’। প্রায় ১৭ লাখ নিয়মিত ক্রেতা, ২০ হাজারের বেশি বিক্রেতা নিয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে স্বল্প সময়ে প্রথম সারিতে উঠে আসে ‘ইভ্যালি’।

এমনকি এশিয়ার মধ্যে স্বল্প সময়ে দ্রুতবর্ধনশীল ই-কমার্স স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ও বিজনেস লিডার হিসেবে অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন মোহাম্মদ রাসেল।

ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।

এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি অল্প সময়ে আলোচনায় আসে দেশজুড়ে। তবে সেই আলোচনা বেশিদিন সুনামের সঙ্গে ধরে রাখতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে গ্রাহকদের পুঁজি দিয়েই ‘সাইক্লোন’ (ঘূর্ণিঝড়), আর্থকুয়েক’ (ভূমিকম্প) নামে ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাকের লোভনীয় অফার দিয়েছিল ইভ্যালি। ব্যবসার এই কৌশলে মানুষের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। তবে সেই উদ্দীপনা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এখন ইভ্যালির কাছে পাওনা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে হতাশা তৈরি হয়েছে।

ইভ্যালীর গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাক এবং প্রতিষ্ঠানের এই অনিয়ম দুর্নীতির বিচার হোক, শুধু এই প্রতিষ্ঠাননা প্রতারণার সাথে জড়িত সকল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানেরই শাস্তি হোক আমরা এটাই চাই। তবে, ইভ্যালী প্রতারক মানে ই-কমার্স সেক্টরটি প্রতারণামূলক তা না। ই-কমার্স একটা সম্ভাবনাময় খাত। ই-কমার্স শুধু বাংলাদেশে না বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কতিপয় দুয়েকটা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে ই-কমার্সের মতো সম্ভাবনাময় খাতটি হুমকির মুখে। অনেকে এখন ইভ্যালীর সমালোচনা করতে করতে অনেকে এখন ই-কমার্স এবং এমএলএমকে গুলিয়ে ফেলছে। অথচ সহজ কথা হল অতিরিক্ত লোভ মানুষকে বিপদ ডেকে আনে, লক্ষ টাকার পন্য কখনো হাজার টাকা হতে পারেনা! যেখানে অস্বাভাবিক সুযোগ সুবিধা সেখানে অবশ্যই ভেজাল আছে। তা আমাদের বুঝতে হবে, জানতে হবে। ই-কমার্স কখনোই খারাপ নয়। এমাজন, আলীবাবার মতো কোম্পানিগুলোতো কখনো এরকম আজগুবি  অফার দেয় না, তাই ওখান থেকে পন্য কিনে কেউ ঠকেও না। ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এটা একটা পজিটিভ দিক। মানুষ ঘরে বসে পণ্য পাচ্ছে।  নতুন নতুন উদ্যেক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু পুরুষরা নয় এখন ই-কমার্স সেক্টরে কাজ করে নারীদেরও একটা বিশাল অংশ উদ্যেক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে, যার প্রমাণ দেশের নারী উদ্যেক্তাদের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম Women & E-commerce Forum(WE)। 'উই' এর ফেসবুক গ্রুপে প্রবেশ করলে দেখা যায় এখানে কতশত ক্ষুদ্র উদ্যেক্তার সমাহার। যারা সৎভাবে জীবিকা অর্জন করছে কোন ধরনের প্রলোভন প্রতারণা ছাড়া। তাই,আমি মনে করি এই সেক্টরটিকে বাঁচাতে হবে। এই সেক্টরে সৎভাবে কাজ করা উদ্যেক্তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবেও উৎসাহিত করতে হবে,পুরস্কৃত করতে হবে। আর রাতারাতি অস্বাভাবিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে পণ্য বেচাকেনার সকল প্রতারক প্রতিষ্ঠানদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক ভীত মজবুত হবে এবং আত্মকর্মসংস্থানে মানুষ উদ্ধুদ্ধ হবে।

লেখকঃ মুহাম্মদ আশ্রাফুল আলম ভূঁইয়া
উপদেষ্টাঃ 'বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম'
(বৃহত্তর চট্টগ্রাম শাখা)


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল