সর্বশেষ সংবাদ
ডা. রাসেল চৌধুরী :
পরীমনিকে গ্রেপ্তার করেছিলো র্যাব। বিশাল বহর নিয়ে। মামলায় বলেছিলো, অজ্ঞাত ব্যক্তির মাধ্যমে পরীমনি মাদক ব্যবসা করতেন। সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী। অথচ তিনবার রিমান্ডে নিয়েও মাদক ব্যবসার কোনো প্রমাণই পেলো না র্যাব পুলিশ।
এমনকি সেই মাদক রহস্য উদঘাটনের জন্য পরীমণিকে যে ৩ বার রিমান্ডে নিয়েছিলো পুলিশ, সেই রিমান্ডকে অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতের বিচারকরা সেই রিমান্ড মঞ্জুর করার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা পর্যন্ত চেয়েছেন।
নিঃসন্দেহে হাইকোর্টের এই রায় পুলিশের অপ্রয়োজনীয় জিঘাংসার রিমান্ডকান্ডে এক বড় ধরনের চটোপাঘাত।
আচ্ছা সেই মিডিয়ায় ক্ষণে ক্ষণে চেহারা দেখানো অতি উৎসাহী র্যাব পুলিশরা এখন কি বলবেন? শুধু বিচারকরা ক্ষমা চাইলে হবে কেনো, মিথ্যা অভিযোগে সেই রিমান্ডে নেয়ার জন্য পুলিশ র্যাবের সদস্যরা ক্ষমা চাইবেন না?
মূল কথা হচ্ছে, এলিট বাহিনী র্যাব কাউকে গ্রেপ্তার করলেই মনের মাধুরী মিশিয়ে গালগপ্পো বানিয়ে ফেলে। এলিট ফোর্স হলেও তাঁদের সেই গালগপ্পের গাঁথুনি সস্তা উপন্যাসের চেয়েও নিম্নমানের। এককালে নির্বিচারে ক্রসফায়ার করে বন্দুকযুদ্ধের অজস্র মিথ্যা গল্প সাজাতো, আর এখন তো একদম যাকে তাঁকে নিয়ে গল্প বানিয়ে ফেলে।
কাউকে ধরলেই সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাকগ্রাউন্ডে ছবি লাগিয়ে সাংবাদিক ডেকে এই ধরনের র্যাব পুলিশীয় কান্ড বহুবার অবৈধ ঘোষণা করেছে উচ্চ আদালত।
গতকালও র্যাব একই কান্ড করেছে। ইভ্যালির এমডি, চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদেরকে রীতিমতো শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো করে উপস্থাপন করেছে। রাসেল সাহেব নাকি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের হোতা। আশা করি সেই অজ্ঞাত সংঘবদ্ধ চক্রের খোঁজ বের করবে র্যাব। অথচ ইভ্যালির অনিয়ম কি ধরনের, সেটা এদেশের সাধারণ আমজনতাও জানে। তাই পরীমনির মতো এখানেও অজ্ঞাত চক্রের খোঁজ বের করতে না পারলে নাকে খত দিয়ে মাপ চাওয়া উচিত র্যাবের ।
শুধু তাই নয় স্টার্ট আপ বিনিয়োগ সম্বন্ধে ন্যুনতম ধারণা না রাখা র্যাব মুখপাত্র বলেছে, রাসেল সাহেব ইভ্যালিকে বিদেশি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে চেয়েছে। আরে উজবুক, বিদেশি বিনিয়োগ আনা মানেই যদি প্রতারণা তাহলেতো পাঠাও, দারাজ,চালডাল,শপ আপ, দারাজ সবই প্রতারক।
আমি এখানে ইভ্যালির সাফাই গাইতে আসিনি। ইভ্যালির ব্যবসায় অনেক অনিয়ম আছে। কিন্তু সেটার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দায়ও কম নয়। স্বয়ং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ইভ্যালিকে ভূয়সী প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন।
ইভ্যালির অনিয়মের বড় কারণ ছিলো ই-কমার্স নীতিমালার অভাব। এখন যেহেতু নতুন নীতিমালা হয়েছে তাই উচিত ইভ্যালিকে সেই আলোকে ব্যবসার সুযোগ দেয়া। প্রয়োজনে সরকার থেকে প্রশাসক নিয়োগ করে নজরদারি করা হোক।
কেনো এমনটা চাইছি? কারণ খুনের আসামির দায় আর ব্যবসায় অনিয়মের দায় এক নয়। খুনের আসামির জেল ফাঁসি সমাজ চায়, কারণ সেটা হলেই খুনের শিকার ব্যক্তির স্বজনরা শান্তি পায়।
কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। ইভ্যালির গ্রাহকেরা কি চায়? সস্ত্রীক রাসেল সাহেবের জেল ফাঁসি হলে তাঁরা টাকা বা পণ্য পাবে? টাকা হারানোর শোক ভুলে শান্তি পাবে? পাবে না। বরং যেহেতু ইভ্যালির বিশাল এক ফ্যান ফলোয়ার আছে, তাই ইভ্যালিকে ব্যবসার সুযোগ দিলেই বরং গ্রাহকরা তাঁদের ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।
আর পুলিশকে বলি, হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ আছে যে, কাউকে গ্রেপ্তার করে মিডিয়ার মুখোমুখি করা যাবে না। স্ত্রীহত্যার জন্য দায়ী এসপি বাবুল বা সিনহা হত্যার জন্য দায়ী ওসি প্রদীপ বা নারায়ণগঞ্জ এইট মার্ডার হত্যার আসামি র্যাব সদস্যদের নিয়ে কিন্তু আপনারা মিডিয়ায় ছবি দিয়ে খুনী বলে সংবাদ সম্মেলন করেননি। এইসব দাগী আসামিদের আপনারা মিডিয়ার সামনে খুনী বলেন না, কারণ এতে আপনাদের বাহিনীর অসম্মান হয়। মনে রাখবেন দুনিয়ায় একমাত্র আপনারাই সম্মানিত নন, আরো পেশার মানুষও গ্রেপ্তার হলেই দাগী অপরাধী নয়।
শুধু তাই নয় রিমান্ডপ্রথা এদেশের আইনি কাঠামোতেই নেই। তারপরও কথায় কথায় রিমান্ডে নিয়ে আপনাদের নির্যাতন চালাতে হয়, কারণ আধুনিক তদন্তকাজ সম্বন্ধে আপনাদের দক্ষতা এখনো পাথর যুগের। রিমান্ডের কারণেই জজ মিয়াকে আপনাদের পূর্বসূরীরাই বংগবন্ধু কন্যা হত্যার ২১ শে আগস্ট ঘটনার মূল আসামি বানিয়েছিলো।
সরকারকে বলছি, পুলিশের রিমান্ড প্রথা বন্ধ করুন। জজ মিয়ার পৌনপুনিক পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই আধুনিক উন্নত সমাজের দর্পন হতে পারে না।
এ বিভাগের আরো
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল