বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

জুনিয়র চিকিৎসকদের বিড়ম্বনা

সোমবার, অক্টোবর ৪, ২০২১
জুনিয়র চিকিৎসকদের বিড়ম্বনা

ডা. কামরুল হাসান রাহাত :
গত সপ্তাহে হাসপাতালের আউটডোরে আমার কাছে এক রোগী আসে। কাগজপত্র ঘেটে দেখি আগের দিনই তিনি প্রাইভেট চেম্বারে এক চিকিৎসক দেখিয়েছেন। চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেখে বুঝলাম সদ্য পাস করা। স্বামী-স্ত্রী একসাথে চেম্বার করেন। সম্ভবত নতুন প্রাকটিস শুরু করছেন তাঁরা।
রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলাম তাঁরা যা ডায়াগোনসিস করেছেন তা ঠিকই আছে। ওষুধপত্রও যা লেখার তাও লেখা আছে। নতুন ডাক্তার তাই খুব যত্ন নিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখেছেন। কি কি নিয়ম মানতে হবে সেটাও সুন্দর হাতের লেখায় পরিষ্কারভাবে লেখা।
রোগীকে জিজ্ঞেস করলাম, আগের ডাক্তার যা চিকিৎসা দিয়েছেন সবইতো ঠিক আছে। ওনাকে দেখাইছেন ২৪ ঘণ্টাওতো হয়নি, আবার আমাকে দেখাতে আসলেন কেন? প্রশ্ন শুনে রোগী বললো, ‘না মানে ঠিক ভরসা পাইতেছিলাম না, ভাবলাম আপনারে দেখাইয়া কনফার্ম হই।’
এই কথা শুনে আমার ১০ বছর আগের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। বহুত টাকা-পয়সা ধার করে, জমানো টাকা ভেঙে দুই বন্ধু মিলে চেম্বার দিয়ে প্রাকটিস শুরু করছিলাম। এসিস্টেন্ট রাখার টাকা নাই। দুই বন্ধু নিজেই চেম্বার খুলি, ঝাড়ু দেই, নিজেই চেম্বার বন্ধ করি।
রোগীরা তখন ডাক্তার দেখাইতে আসতো না, ডাক্তার কি কি পারে টেস্ট করতে আসতো। সন্ধ্যায় পাড়ার আন্টিরা হাটতে বের হলো ভাবতো, ‘যাই নতুন ডাক্তার দুইটারে বাজাইয়া দেখি, কিছু পারেনি।’ অনেকে চেম্বারে ঢুকেই বলতো ‘আমিতো প্রফেসর ছাড়া দেখাই না, কিন্তু আপনার চেম্বারটা বাসার সামনে ভাবলাম একটু পরামর্শ কইরা যাই।’
পরিচিত বড় ভাইরা ফোন দিয়ে বলতো, ‘আমাদের বাসার আশপাশে ভালো দাঁতের ডাক্তার কে আছে ঠিকানা দেও তো।’ অথচ তাঁর বাসার দুই কদম দূরেই আমার চেম্বার। পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে বলে, ‘ওহ ভাঙতি নাই।’ এদিকে আমার কাছেও নাই, তাই রোগী গরিব ডাক্তারের ৩০০ টাকা ফি না দিয়ে চলে যায়।
রোগীরা পরামর্শ করতে আসতো, আন্টিরা বাজাইয়া দেখতে চাইতো, ভালো ডাক্তারের খোঁজ চাইতো। দায়ে পরে অধম নতুন ডাক্তারদের দেখাতে হলেও যাওয়ার সময় ফি না দিয়া দোয়া করে যাইতো যাতে জীবনে অনেক বড় হই। কেউ কেউ দুই হাত তুলে খাস দিলে দোয়া করতো। কিন্তু ফি দিতো না। নতুন ডাক্তার তাই শরমে বড় ভাই, আংকেল, পাড়াতো আন্টিদের কাছে ফি চাইতে পারতাম না।
দিনে দিনে দেনা বাড়ে, চেম্বারের ভাড়া উঠে না, লোন শোধ হয় না, সাইনবোর্ডের উপর শ্যাওলা পরে, প্যানাফ্লেক্সের টিউব মিটিমিটি জ্বলে একসময় নিভে যায়। চেম্বার বন্ধ করে দেই, জিনিসপত্র বেঁচে দেই পানির দরে।
দিন যায়, বছর কাটে, অনুভূতি ভোঁতা হয়। এখন চেম্বারে রোগী ঢোকার আগেই এসিস্টেন্ট বলে দেয় স্যারের ‘ফি’ এত। ভাঙতি না থাকলে বলে ‘ওয়েটিং রুমে বসেন, ভাঙ্গাইয়া আনতেছি।’ গরিব কোন রোগীর ফি না রাখলে বিরক্ত হয়ে বলে ‘স্যার এসব কি করেন।’ মানুষ সিরিয়াল দিয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। পুরান রোগীরা নতুন রোগীদের কাছে ওয়েটিং রুমে বসে প্রশংসা করে। বাইরে যাইয়া কেউ কেউ বলে ‘শালায় তো কসাই, অর্ধেক খরচে নাপিত ডাক্তারের’ কাছে ট্রিটমেন্ট করা যায়।
তো এভাবেই জীবন যায়। আমি নতুন পাস করা হাজবেন্ড ওয়াইফ ডাক্তার দম্পত্তির কথা ভেবে কষ্ট পাই। ওদের মধ্যে কি আলোচনা হয় আমি জানি। হয়তো ওয়াইফ বলে “এমন হলে আর কত দিন?” হাজবেন্ড হয়তো এর কোন উত্তর খুঁজে পায় না। আমার ইচ্ছা হয় রোগীকে জিজ্ঞেস করি ‘ভাই ওনাদের ফি দিছিলেন তো?’ কিন্তু জিজ্ঞেস করা হয় না। সবকিছু জিজ্ঞেস করা যায় না।
লেখক : ডা. কামরুল হাসান রাহাত
ডেন্টাল সার্জন,
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল