রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আদর্শের কারিগর শেখ মুজিবুর রহমান

মঙ্গলবার, মার্চ ১৬, ২০২১
আদর্শের কারিগর শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গ রাখাল *

আমাদের নেতা, আমাদের পিতা, নিদারুণ একজন জনপ্রিয় এবং জনদরদী বিপ্লবস্পৃহার মানুষই বটে সবাইকে নিয়ে চলতেই তিনি পছন্দ করতেন কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর কাজ অন্যায়কে তিনি মেনে নিতে পারতেন না কিংবা জীবনে কোন দিনই অন্যায়কে সমর্থন করেননি যে কারণে তাকে বার বার রাস্তায় নামতে হয়েছে এবং কারাবরণের জীবনকে বেছে নিতে হয়েছে তিনি সময়ের লাগাম টেনে ধরতে জানতেন যে জন্য তিনি সময় থেকেও অনেক এগিয়ে থেকেছেন এজন্যই তো নেতা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে পারেন, ওরা আমাকে হত্যা করতে পারে কিন্তু বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না ওরা আমাকে হত্যা করলে লক্ষ মুজিবের জন্ম হবে একথাটা শুনলেই আর আমাদের বুঝতে বাকী থাকে না যে, তিনি কতটা বিশসী ছিলেন এদেশের জনসাধারণের প্রতি যে আমি মরলে ক্ষতি নেই আমার মত লক্ষ লক্ষ মুজিবের জন্ম হবে এই বাংলার মাটিতে সেই আমাদের প্রাণের পুরুষ, যাকে আমরা নিজেদের জীবন দিয়ে অনুভব করি সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করা আর অনাহারী নির্যাতিত, পদদলিত, নিম্নবিত্ত, বস্ত্রহীন, শিক্ষাহীন, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয় নিয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে এদেশে একজন নেতার আগমন ঘটে যিনি মানুষ ব্যতিত অন্য কিছু চিন্তা করতে পারেননি তিনিই তো আমাদের সবার জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান তিনি অন্তরে ধারণ করতেন শিল্প সাহিত্য কিংবা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির অভিপ্রায় স্বার্থের কোন ইচ্ছাপাখি শেখ মুজিবুর রহমানের অন্তরে কোনোদিন বাসা বাঁধেনি এদেশের মানুষের মুক্তির কথা স্মরণ করে তিনি নিজের জীবনও বিলিয়ে দিয়েছেন যখন তিনি বলেন- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এর চেয়ে মহাশক্তি আর কী হতে পারেএই ভাষণই সেদিন ছিল মুক্তিকামী বাঙালি জাতি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের সকল অনুপ্রেরণার উৎসশক্তি সেদিন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বার বার এই ভাষণই প্রচার করা হয়েছে যে প্রচার ছিল বাঙ্গালির একধরনের সঞ্জীবনী শক্তি

 

শেখ মুজিবুর রহমান অকুতোভয় একজন বীরসৈনিক মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি তাঁর পথ থেকে পিছ পা হননি তিনি শত্রুর কাছে কখনো মাথানত করেননি, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না এবং যাবার সময় বলে যাবো, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান নেতার অন্তরে প্রতি মুহূর্তে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত ছিল তিনি তাঁর সাহস, বাগ্মিতা আর অনমনীয়তা দিয়েই তো অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের দিয়েছেন স্বাধীনতা

 

আমরা সেই জাতি যে জাতি আমাদের নেতাকে আমরাই ১৫ই আগষ্ট হত্যা করেছি ঝাঝরা করে দিয়েছি আমাদের নেতার বুকসহ তাঁর পরিবারকে ছোট্ট ছেলে রাসেলকেউ ক্ষমা করা হয়নি যে রাসেল ছোট্ট দুটি হাত তুলে বলেছে, আমাকে ছেড়ে দেও আমি আর এখানে থাকবো না আমি আমার হাসুবুর কাছে চলে যাবো তবু সেদিন আমরা তাকে ক্ষমা করিনি হত্যা করি নির্মমভাবে আমরা আমাদের নেতাকে মানে আমাদের স্বদেশকেই সেদিন হত্যা করেছি যে আমাদের স্বাধীনতা দিল আমরা প্রতিদানে তাঁরসহ তাঁর পরিবারের জীবন নিয়েছি যে আমাদের লাগিয়া কাঁন্দে- আমরা তাকে ভৎসনা করি শুধু ভৎসনাই নয় তাকে হত্যা করে পৃথিবীর বুকে এক কালো জাতি হিসেবে নিজেদের নাম লেখায়

 

আমাদের পিতাকে আমরা হত্যা করেছি আমরা তাঁর কুলাঙ্গার সন্তান একটা জাতি যখন বিক্ষোভ, যন্ত্রণা- আত্মপীড়নের মধ্য দিয়ে সময়কে অতিক্রম করছিল, মানুষের জীবন যখন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিল ঠিক তখনি আমাদের একজন সত্য ন্যায় আর আদর্শের প্রত্যয়ী বলিষ্ঠ বিবেকের আত্মপ্রকাশ ঘটে বিপর্যস্ত মানুষের নির্মম অসংলগ্নতাকে মনোজগতের উদঘাটনে মৃত্যু চিন্তাকে পদতলে পিষ্ট করে নেতা এগিয়ে যান সামনের দিকে আজ দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে কিন্তু সেদিন নেতা আমাদের অভয় দিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক ভাতকাপড় মাথা গোঁজার ঠাই পাবে, বাংলাদেশ থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি দূর করা হবে দখলদার বাহিনির বিচার হবে পাকিস্তানী বর্বর বাহিনীর গণহত্যার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করা হবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে, আমরা প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, প্রয়োজনে প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা সুরক্ষা করব নেতারকথা আমাদের নেতাশূন্য স্বদেশে বার বার মনে পড়ে এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? যেখানে ঘরের মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারে না যে মানুষটা ঘর থেকে ভাল মানুষ বের হয়ে গেলেও ফিরছে লাশ হয়ে একটা পরিবার চিরদিনের মত রাস্তায় বসে পড়ছে বোন ধর্ষিত হচ্ছে, মা অথবা বাবার সামনে বিচার, জবাবহীনতার রাজনীতি শুরু হয়েছে আমাদের নেতা তো এমন সমাজ, দেশ কিংবা রাষ্ট্র চাননি তিনি চেয়েছিলেন সম্প্রীতির স্বদেশ, সোনালী, রুপালি, সবুজবরণ বাংলা জননীকে যার মাতৃছায়ায় সকল সন্তান নিরবিচারে জীবনযাপন করবে তাইতো নেতা বলতে পারেন, স্বপ্ন আমার সফল হইয়াছে...স্বাধীনতা আর কেউ হরণ করিতে পারবে না

 

মানুষ তার স্বাধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবে না বেকারত্বের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে সাম্য, ন্যায় আর আর্দশিকতা আজ শূন্যের কোটায় যে বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিল- সোনার বাংলার তাঁর শিক্ষা নীতি, সমাজ ব্যবস্থা আর সামাজিক সুষম বণ্টননীতির পরিসমাপ্তি ঘটছে দিন দিন যারা বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে নিতে মুখে ফ্যানা তুলছেন তারাই তাকে ধ্বংস করেছেন তিনি এখন জীবিত থাকলেও বলতেন এই দেশ আমি চাই না এটা আমার স্বপ্নের দেশ না দেশের মানুষের চোখে জল দেখে নেতার চোখে জল গড়াতো যিনি মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরতেন সেই নেতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে এখনো সময় আছে সবার আগে নীতি নৈতিকা আর আদর্শের চর্চা করতে হবে তবেই শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন আমাদের সবার লালায়িত স্বপ্ন, বাস্তবতায় রূপ লাভ করবে একজন সত্য, ন্যায় সাম্যবাদী নেতা সবুজাভ, শ্যামল দেশ নির্মাণের বাসনায় হাতে তুলে নেন রং তুলি কিংবা চিত্রকল্প আঁকেন নিজের অন্তর জগতে সেই আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি রাখাল রাজা হিসেবে এই নিখিল বাংলার মানুষ যার অভিজ্ঞান আর ভরাট কণ্ঠস্বর একটা জাতিকে তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে কতদূর নিয়ে যেতে পারে তার সৃজনীলিরিক স্বয়ং বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু সেই মাপের নেতা যার চিন্তার আকাশ জুড়ে ছিল সমাজতন্ত্রের প্রকাশ যে কারণে তাঁর বইয়ের তাকের মধ্যে মার্কস, লেলিনের গ্রন্থ ছিল তিনি অন্যায়ের কাছে মাথানত করেন নি এমনকি নিজে না খেয়ে অন্যকে খায়িয়েছেন নিজে টাকা জমিয়ে অন্যদের উপকার করেছেন তিনি এক দেখাতেই মানুষের মনের কথা অনুভব করতে পারতেন আমাদের নেতাই হতে পারে আদর্শের কারিগর যে বাঙালির ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে নিজস্ব স্পষ্ট ব্যক্তিত্ত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটান তিনিই তো হতে পারেন কোনো স্বপ্নের নায়ক একসময় আমিও ভাবতাম বঙ্গবন্ধুই হতে পারে আমাদের একমাত্র কান্ডারী যে নিজের জীবন এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য দিয়ে গেলেন তিনি কি করে প্রবঞ্চক হবেন মানুষের প্রতি এত উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর প্রত্যক্ষ প্রমাণ মেলে নেতার আচার ব্যবহার আর কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি অসহায় কবি সাহিত্যিকদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি কখনো কোনো মানুষের সাথে বিচ্ছিন্নতার সর্ম্পক গড়ে তোলেননি ব্যবহারের দিক থেকেও তিনি ছিলেন এক অমায়িক মানুষ তাঁর স্বপ্নকে কিংবা জীবন প্রণালী মেনেও যদি আজ এদেশ পরিচালিত হয় তাহলে এদেশে কোনো মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না কেউ আর অবহেলিত, নিপীড়িত হবে না এদেশ গরিবের, ফকিরের, এদেশ আমাদের সকলের তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন ধানমন্ডির ৩২ বাসায় গেলেই তার প্রমাণ মিলবে চাকচিক্য তিনি পছন্দ করতেন না অতি সাধারণের জীবনই যেন তাকে অসাধারণ করে তুলেছে একজন নেতাকে দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় এসে ভিড় করে, একনজর তারা দেশনেতার মুখ দেখবে তাঁর মুক্তির জন্য দীনহীন মানুষও দরগায় সিন্নি করেছে, রোজা থেকেছে এমনকি নিজের সবকিছু বিলিন করে দিয়েছেন একমাত্র মানবদরদীয়া নেতার লাগিয়া পরাণ কান্দে যে নেতাও এদেশের মানুষের মুক্ত করার জন্যই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন আজ আমরা দেশের মানুষ কি তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে সোনার বাংলা করে রাখতে পেরেছি না, আমরা রাখতে পারিনি আমাদের দেশের রাজনৈতিক পটবারবার পরিবর্তিত হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে এবং বিরোধি শক্তি আমাদের নেতার স্বপ্নকে ধূলিরসাদ করে নিজেরা হয়ে উঠেছেন সোনার বাংলা নির্মাণের প্রতিষ্ঠাতা যুদ্ধের বিরোধি শক্তি হয়ে উঠেছে মহাক্ষমতার কর্ণধর নেতাকেও একসময় বুকের তাজা রক্তে লেখতে হয়েছে বাংলাদেশের রক্তাক্ত নাম


লেখক : বঙ্গ রাখাল

কবি প্রাবন্ধিক


সময় জার্নাল/ইম 


 

 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল