রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

অদম্য লাঠিয়াল রুপন্তী

শনিবার, মার্চ ২০, ২০২১
অদম্য লাঠিয়াল রুপন্তী

ইমাম মেহেদী


অদম্য লাঠিয়াল রুপন্তীর সাথে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের লাঠিখেলা নিয়ে কথা হলো গত ১৩ মার্চ, শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার মিরপুর বাসায়। রুপন্তী জানালেন, লাঠিখেলা তাদের শত বছরের পারিবারিক ঐতিহ্য। এর সঙ্গে মিশে রয়েছে দাদা, বাবা অর্থাৎ তিন প্রজন্মের প্রায় শত লাঠি  খেলোয়ারের স্মৃতি। নারী-পুরুষ, শিশু বিভেদ নাই। পরিবারের কমবেশি সবাই পারদর্শি। আমি তো ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত লাঠি খেলা করি।

 

দাদা সিরাজুল হক চৌধুরী যাকে সবাই চেনেন ওস্তাদ ভাই নামে। ১৯৩৩ সালে তিনিই প্রথম নিখিল বঙ্গ লাঠিয়াল বাহিনি প্রতিষ্ঠা করেন। দাদার হাত ধরেই বাবা মঞ্জরুল হক চৌধুরীর (রতন চৌধুরি) হাতে লাঠি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাম পরির্বতন করে রাখেন-বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী

  

শতবছরের ঐতিহ্যের লাঠির পরমপরা দাদা বাবার পর এখন রুপন্তীর হাতে। তবে শুরুটা ছোট বেলায় ওস্তাদ শুকুর আলী এবং ওসমান সরদারের হাত থেকে। ওসমান সরদার পদ্মার চর খেলায় বিশেষজ্ঞ ছিলেন। রুপন্তীর পরিবারের সবাই লাঠিখেলায় জড়িত। ফুফু হাসনা বানু বাংলাদেশের প্রথম নারী লাঠিয়াল। ফুফাতো বোন শাহিনা শারমিন সুলতানাও লাঠি খেলায় পারদর্শি। দশম শ্রেণিতে পড়া ছোটবোন ক্রমন্তিও লাঠি খেলা করে।

 

পুরো নাম মঞ্জুরীন সাবরিন চৌধুরী রুপন্তী। জন্ম ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ সালে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর। বাবা মায়ের দুই কন্যা সন্তানের মধ্যে রুপন্তী বড়। কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাশ করে চলে আসেন ঢাকায়। রুপপুর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে রাজধানির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোন শেষে করে বর্তমানে কাজ করেছেন লাঠি খেলার প্রশিক্ষক হিসেবে। 


  


রাজধানী ঢাকা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও নড়াইলের সুলতান উৎসবে তিনবার তিনি লাঠি খেলায় অংশ নিয়েছেন। ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারিতে দর্শকের মন জয় করেছেন যশোরের মধুমেলাতে। ১৪২২ এবং ১৪২৩ খ্রিস্টাব্দে পয়লা বৈশাখে ঢাকার টিএসসিতে, ২০১৭ মাচের্র তারিখে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও লাঠি খেলায় অংশগ্রহণ করে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন।

 

প্রথম আলো আয়োজিত ছায়ানটে সাত মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে পেয়েছেন সম্মাননা ২০১৭। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর সাভারে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন (পিএইচএফ) আয়োজিত খেলায়ও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। সেখানেও অনেক বিদেশিরা মুগ্ধ হয়েছেন রুপন্তীর এই লাঠিখেলায়। ২০১৯ সালে বিবিসির হ্যালো চেকরেডিও প্রোগ্রামে, নাগরিক টিভির-নন্দিনীঅনুষ্ঠানে সিটি ইউনিভার্সিটিতে পয়লা বৈশাখ অনুষ্ঠানের লাঠিখেলায় চমক দেখিয়েছেন রুপন্তী। ২০২০ সালে এটিএন নিউজে মুন্নী সাহার পরিচলানায়এই বাংলায়অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আয়োজিত লাঠিখেলা অনুষ্ঠান, জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত রাজধানীর পল্টনে লোকজ ক্রীড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার লাঠির জাদু দেখিয়ে মুগ্ধ করেছেন।

 

সফল কৃতি শিক্ষার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে সদর আসনের এমপি মাহবুবু উল আলম হানিফের হাত থেকে পেয়েছেন সম্মাননা স্মারক ২০১৮। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে রুপন্তী তার লাঠিয়াল বাহিনির প্রতিবেদন। বিবিসি বাংলায়ও উঠে এসেছে এই তরুণীর লাঠি খেলার প্রতিবেদন।


 


দাদা ভাই রোকুনুজ্জামানের কচি কাঁচার মেলায় প্রশিক্ষক হিসেবে শিশুদের লাঠিখেলা শেখান। দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। বর্তমানে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনির নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা প্রায় হাজারের মত।

 

লাঠিখেলা সম্পর্কে রুপন্তী জানালেন, এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের খেলা। মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েও যে স্বাধীন ভাবে সংস্কৃতি চর্চা খেলাধুলা করা যায় আমাদের পরিবারই তার উদাহরণ। একসময় অনেকেই বাকা চোখে দেখতো কিন্তু আমি মনে করি লাঠিখেলা শুধু ঐতিহ্য নয়, আতœরক্ষারও জন্য প্রয়োজন। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। কারণ পথে ঘাটে চলতে বিভিন্ন সময়  মেয়েদের ইভটিজিং  যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। খেলাধুলা করলে মন শরীর দুটোই ভালো থাকে।

 

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে লাঠি খেলা বিলুপ্তির পথে। কারণ এখানে লাঠিয়ালরা সরকারি বেসরকারি ভাবে কোন অর্থ পান না। লাঠি খেলা যেহেতু আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ, সেহেতু আমরা চাই এটি ধরে রাখতে। আমি চাই জাতীয় থেকে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে আমাদের লাঠিয়ালদের নৈপুণ্য তুলে ধরতে। ইতোমধ্যে তা সফলভাবে করতেও পেরেছি। আগামীতে বিশে^ মাঝে তুলে ধরতে চাই।

  

রুপন্তীর মা মোশরেবা খাতুন জানালেন, আমাদের কোন ছেলে সন্তান নেই। মেয়েদেরকে নিয়ে আমি গর্ব করি। লাঠিখেলা এখন আমাদের পরিবারেরই একটি অংশ।

 

কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম জানালেনলাঠিখেলা তো এখন আর নেই বললেই চলে। কুষ্টিয়াতে আমরা ধরে রাখছি। এটা আমাদের কুষ্টিয়ার গর্ব যে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করছে এবং ধরে রাখছে। কুষ্টিয়া থেকে ৩০ জনের একটি দল আগামী ১৭ তারিখে ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে লাঠিখেলায় অংশ গ্রহণ করবে। এটি জাতীয় প্রোগ্রাম। তার আগে দশ দিনের ক্যাম্প করবে।

 


সময় জার্নাল/ইম


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল