মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা :
সো, নির্বাচনে গাদ্দাফির ছেলে সাইফের জয়লাভের সম্ভাবনা কতটুকু?
প্রশ্নটা গতকাল করেছিলাম আমার লিবিয়ান কলিগ আব্দুন্নবিকে। সে যে উত্তরটা দিলো, সেটা অবভিয়াস।
সে বলল, সাইফকে প্রতিদ্বন্দিতা করতে দেওয়া হবে কি না, সেটাই এখনও নিশ্চিত না। গতকাল সে কেবল নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যেই সেটার বিরোধিতা শুরু হয়ে গেছে। যেকোনো আইনের ধারা-উপধারা দেখিয়ে অথবা আইসিসির ওয়ারেন্টের অজুহাতেও হয়তো তার নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হতে পারে।
এবং এই সুযোগে সে কিছুক্ষণ গাদ্দাফিকে গালাগালি করে নিলো। কারণ গাদ্দাফির লিবিয়াতে কোনো নির্বাচন ছিল না এবং এই ধরনের আইন-কানুনও খুবই ভেগ ছিল। তাছাড়া আব্দুন্নবি এমনিতেই দারনা শহরের, যেখানকার অধিকাংশ মানুষ কঠিন ইসলামপন্থী এবং গাদ্দাফি-বিরোধী।
তার ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম, মনে কর সব আইনী ঝামেলা শেষ হয়ে শেষ পর্যন্ত সাইফ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারল। তখন কী হবে? তার জেতার সম্ভাবনা কতটুকু? সাধারণ মানুষ কাকে বেশি ভোট দিবে?
আব্দুন্নবি উত্তর দিলো, কেবলমাত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ এদবেইবা যদি নির্বাচনে দাঁড়ায়, তাহলে নির্বাচনে প্রতিন্দ্বদিতা হবে। সে না দাঁড়ালে সাইফের সামনে দাঁড়ানোর মতো শক্ত কোনো প্রার্থী নাই।
এরপরেই সে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলল - কিন্তু এখুয়ান (মুসলিম ব্রাদারহুড) ঝামেলা করবে। তারা নির্বাচন হতে দিবে না। তারা জানে তাদের জেতার মতো কোনো প্রার্থী নাই, সেজন্য তারা ঝামেলা করবে। অ্যাজ এক্সপেক্টেড, আব্দুন্নবি গাদ্দাফি-বিরোধী এবং কিছুটা ইসলামিস্ট হলেও ব্রাদারহুড সমর্থক না।
আব্দুন্নবির কথারই প্রতিফলন দেখতে পেলাম আজ সকালে উঠে, লিবিয়া ফাকাত নামের একটা লিবিয়ান পেজের পোলে। এই পেজটা লিবিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক পেজগুলোর মধ্যে একটা। প্রায় ২.২ মিলিয়ন লাইক।
তারা একটা পোস্ট করেছে সম্ভাব্য ১৮ জন প্রার্থীর ছবি দিয়ে। এবং বলেছে পছন্দের প্রার্থীর ছবিতে লাইক দেওয়ার জন্য।
ফলাফল? এখন পর্যন্ত:
সাইফের ভোট ৩১ হাজার
এদবেইবার ভোট ২৮ হাজার
হাফতারের ভোট ৭.৫ হাজার
অন্যান্য প্রার্থীদের সবার ভোট ২.৫ হাজারের নিচে। এবং এদের অনেকের ক্ষেত্রেই আসলে লাইকের চেয়ে হাহা বেশি।
এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী মোহাম্মদ সাওয়ানের ভোট ৫৬৫। এখানেও লাইকের চেয়ে হাহা বেশি।
সো চিত্রটা মোটামুটি এরকম: যদি এদবেইদা দাঁড়াতে পারে - পারবেই যে, এখনও নিশ্চিত না - তাহলে শক্ত প্রতিদ্বন্দিতা হবে। এবং সেক্ষেত্রে হয়তো সাইফ-বিরোধীরা সবাই তাকে সাপোর্ট দিবে।
কিন্তু যদি সে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে সাইফ সম্ভবত একচেটিয়াভাবে জিতবে। কিন্তু তার বিরোধীরা সবাই যেহেতু এই সমীকরণ জানেই, কাজেই তারা ঐ পথে হাঁটবেই না। সেক্ষেত্রে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে যেন নির্বাচনটাই না হয়, অথবা সাইফ যেন দাঁড়াতেই না পারে।
লেখক : মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা, লিবিয়া প্রবাসী।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। লেখালেখি : রোর বাংলায়। প্রকাশিত বই: স্পাই স্টোরিজ।