গোলাম আজম খান, কক্সবাজার অফিস :
আগুনে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দলে দলে পুরনো ঠিকানায় ফিরছে। অনেকেই নতুন কাঠ, বাস নিয়ে ফিরছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থাও এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে সহস্রাধিক তাঁবু তৈরির কাজ চলছে। হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীরা আহত মানুষদের সেবা প্রদান করছেন।
বুধবার (২৪ মার্চ) সকালে উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকতেই এইসব চিত্র দেখা গেছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়িগুলো রোহিঙ্গারা পরিষ্কার করছেন। রোদ থেকে রক্ষার জন্য বাঁশ দিয়ে ত্রিপল টাঙানো হচ্ছে। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত দিলদার হোসেন নামের এক রোহিঙ্গা জানান, আমাদের বাড়িঘর ও খাবারসহ সব পুড়ে গেছে। আমরা পরিবারসহ খোলা আকাশের নিচে দুই রাত ছিলাম। সর্বস্ব হারিয়ে এখন পুড়ে যাওয়া স্থানেই ফিরছি।
আবুল কাশেম নামের আরেক রোহিঙ্গা জানান, বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় পরিবারসহ পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছিলাম। এখন পরিবারসহ এখানে আসলাম। তাঁরা এখনো ঘর বানাতে পারেননি। সরকারিভাবে কিছু খাবার দেওয়া হচ্ছে। আগুনে যাবতীয় জিনিস পুড়ে যাওয়ায় পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিরাপদ স্থানে যায়। অনেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এছাড়াও কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়ের খোঁজে পরিবার-পরিজনসহ স্থানীয় গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়ে। তাদের মধ্য থেকে অনেকেই স্থান না পেয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করেছেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের খাবারের পাশাপাশি এনজিওগুলোর মাধ্যমে তাদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার কাজ চলছে।
এদিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।
বুধবার (২৪ মার্চ) হেলিকপ্টারে করে তিনি বালুখালীতে পৌঁছেন। এরপর পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
এই সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না,খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কি কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটলো- তা তদন্তে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত সোমবার (২২) মার্চ বিকাল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডেরর সূত্রপাত হয়। এতে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা।
অগ্নিকাণ্ডে ১৫ জনের প্রাণহানির খবর প্রাথমিকভাবে পাওয়া গিয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় সাড়ে পাঁচশ আহত এবং ৪০০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ।
বর্তমানে এদের অধিকাংশই তাঁবু খাটিয়ে এবং অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছিলেন, ৩৮০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও রেডক্রিসেন্টসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা গতকাল দুপুর থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয় সচিব মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিন দিনের মধ্যেই তারা রিপোর্ট জমা দেবে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় জরুরি সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি ক্ষতিগ্রস্থ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে র্যাব-১৫ এর উদ্দোগে ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গাদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেন। এসময় আলহাজ্ব সাইমুম সরোয়ার কমল এমপি,সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, জননিরাপত্তা বিভাগ,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।