শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা এবং নিজের দেশে ফেরা

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২, ২০২২
ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা এবং নিজের দেশে ফেরা

ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসাইন :

গতকাল ঘুমাতে যাবো এমন সময় ফেসবুক লাইভে একজনের আত্মহত্যা করার ঘটনা জানলাম। ভিডিও দেখলাম। উনার জন্য কোন মায়া হয়নি, আফসোস হয়েছে। যতই কালিমা পড়ুক, আত্নহত্যা মহাপাপ। এজন্য আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতে হবে। তিনি মৃত্যুর আগে বড় অন্যায় করে গেছেন নিজের শরীরের সাথে (যেটা আল্লাহ আমানত হিসেবে রেখেছেন) এবং অন্যকে লাইভে এসে আত্মহত্যা করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। এটা স্পষ্ট হওয়া জরুরী মনে করি।
আমরা কেন নি:সংগ হয়ে পড়ি?
শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য। যদিও মনে হয় আমি এত টাকা কামাই করছি পরিবারের জন্য, এতগুলো বাড়ী করছি সন্তানদের জন্য- এগুলো মিথ্যা কথা; এগুলো মূলত নিজের জন্যই আমরা করে থাকি। সন্তান পরিবার ইস্যুটি জাস্ট নিজেকে ফাঁকি দেয়ার জন্য বলে থাকি। নিজেকে গভীরভাবে প্রশ্ন করলে এর জবাব পাওয়া যাবে। সম্পর্ক তৈরিতে, উন্নয়নে অর্থ বা বস্তুগত বেশী কিছু প্রয়োজন পড়ে না।
প্রবাসী জীবনে খুব একাকীত্ব অনুভব করতাম। এজন্য নিজের একটা উক্তি প্রায়ই অনুভব করতাম- Feeling alone in a ocean of people. অন্যান্য সবার মত বিনোদন, পার্টি, গেট-টুগেদার (যেমন ঘন ঘন জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন) করে সময় কাটাতে আগ্রহ আসেনি কখনো। সবার যে এক ধাঁচের চিন্তা করতে হবে তা নয়। হয়ত এটাই আমার সহজাত বৈশিষ্ট্য। সেই একাকীত্ব কাটাতে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতাম, বিশ্বের বিভিন্ন কিছু জানার এবং বোঝার চেষ্টা করতাম।
প্রবাসকালীন সময়ে দেশ থেকে ফেরার সময় প্রচন্ড খারাপ লাগত- আব্বা, আম্মার চেহারার দিকে তাকাতাম না। প্রবাসে প্রায় প্রতিদিন-ই নিজেকে প্রশ্ন করতাম- কেন এখানে? ভাল খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানোই কি জীবনের উদ্দেশ্য? সবকিছু রেখেই তো কবরে চলে যেতে হবে। মাত্র কয়েক বছর লাইফের জন্য এত প্রিপারেশন, এত আকাঙ্ক্ষা?--- এসব প্রশ্নে রীতিমত নিজের সাথে যুদ্ধ হতো।
অবশেষে দেশে ফেরা হলো। দেশে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হলো। দেশে বাস করা রিস্কিও, কেননা মন খুলে কথা বলা যায় না। রাজনীতিবিদরাা এই শান্তি কেড়ে নিয়েছে। এতকিছুর পরও তৃপ্তি রয়েছে।
এখানে মানুষের সাথে মেশার সুযোগ রয়েছে। অন্যের কষ্টে ভাগীদার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রবাসের অভিজ্ঞতা না থাকলে হয়ত এইটা অনুধাবন আসত না। এগুলোকে নিয়ামত হিসেবে অনুধাবন করা কঠিন মনে হতো।
ছোটবেলার একটি স্বপ্নপূরন হয়েছে । আব্বার মৃত্যুর সময় আল্লাহর ইচ্ছায় পাশে ছিলাম পরিবার নিয়ে। স্বপরিবার বেড়াতে গিয়ে সুস্থ আব্বা কালিমা পড়তে পড়তে ইন্তেকাল করলেন। সেসময় ইনসেপ্টার জব ছাড়তে বাধ্য না হলে হয়ত এই সুযোগ/নিয়ামত থেকে বঞ্জিত হতাম। কেননা ঐদিন জামালপুর যাওয়ার মত প্রেক্ষাপট তৈরী হতো না। থ্যালাসেমিয়া রিসার্চ, রোগীদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ হতো না। এজন্য জব না থাকাও আখেরে নিয়ামত হতে পারে। আম্মার কোভিডের আইসিইউ এর দিনগুলোতে পাশে থাকার তৌফিক আল্লাহ দিয়েছেন।
মানুষের সাথে আত্মীক সম্পর্ক গড়ে তুলতে কমিউনিটি বেইজড রিসার্চ করার সুযোগ পেয়েছি। মাঠ লেভেলের রিসার্চের কাজের মাধ্যমে মানুষের সাথ হৃদ্যতা বেশী অনুভূত হয়। শিক্ষকতা করার মাধ্যমে ইয়াংদের সাথে মেশার, অনুপ্রাণিত করার অন্যরকমের সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন। এভাবে মানুষের মাঝে বাকী সময়টা কেটে গেলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হবে।
যেখানেই থাকুন না কেন মানুষের সাথে আত্মীক সম্পর্ক গড়ে তুলুন।মানুষের কল্যানের (community service) প্রচেষ্টায় নিজেকে জড়িত করার চেষ্টা করুন। এতে একাকীত্ব কাজ করবে না।

লেখক : গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল