ডা. হামীম ইবনে কাওছার, (শিক্ষক-বিজ্ঞানী-চিকিৎসক, মেরীল্যাণ্ড, যুক্তরাষ্ট্র) : 
(১)
মস্তিষ্কের কার্যক্রম বুঝতে সাধারণত যে পরীক্ষাটি করা হয় তাকে বলে ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম বা ইইজি। ইইজি তে সাধারণত চার প্রকার ওয়েভ থাকে। আলফা, বিটা, থেটা এবং ডেল্টা। আলফা ওয়েভ হলো মস্তিষ্কের জাগ্রত কিন্তু প্রশান্তির অবস্থা নির্দেশ করে।  অন্যদিকে, বিটা ওয়েভ নির্দেশ করে জাগ্রত কিন্তু অত্যন্ত সতর্ক এবং সজাগবস্থা। থেটা ওয়েভ থাকে হালকা ঘুমাবস্থায়  আর ডেল্টা ওয়েভ হলো প্রশান্তির ঘুম অবস্থায়। 
(২)
সালাত বা নামাজে মস্তিষ্কের এবং হৃদপিণ্ডের কি পরিবর্তন হয়? ইইজি এবং ইসিজি দিয়ে সেটা নির্ণয় করা সম্ভব। নামাজের আগে, নামাজের সময় এবং নামাজের পরে ইইজি এবং ইসিজি তে কি পরিবর্তন হয়, তা রেকর্ড করা সম্ভব, এবং হৃদ্স্পন্দনে যে পরিবর্তন হয়, তা নির্ণয় করা সম্ভব। সালাত এর ফলে মস্তিষ্কে এবং হৃদক্রিয়াযা কি পরিবর্তন হয় তা দেখার জন্য ইইজি-এর আলফা রিলেটিভ পাওয়ার এবং অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম একটিভিটি, এবং এদের একে ওপরের সম্পর্কে দেখার জন্য ইইজি-র স্পেকট্রাল বিশ্লেষণ এবং হার্ট রেট ভ্যারিয়েবিলিটি নিরুপন করা হয়েছে।  
(৩)
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সালাতরত অবস্থায় মস্তিষ্কের ইইজি তে আলফা ওয়েভ-এর পরিমান সবচেয়ে বেশি থাকে, মূলত প্যারাইটাল এবং অক্সিপিটাল লোব-এ।  সাধারণত আলফা ওয়েভ এর পরিমান/মাত্রা বৃদ্ধি হয় যখন প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম বেশি কাজ করে এবং সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম নিষ্ক্রিয় থাকে।  ইলেক্ট্রফিজিক্যাল তথ্যে দেখা গিয়েছে সিম্প্যাথো-ভ্যাগাল ব্যালান্স পরিবর্তিত হয়। সালাতের আগে-পরে এর অনুপাত থাকে ১.৭ কিন্তু সালাতের সময় এই অনুপাত কমে ১.৫ হয়। অর্থাৎ, সালাতের সময় সিমপ্যাথেটিক এর চেয়ে প্যারাসিমপ্যাথেটিক একটিভিটি বেশি হয়।  তার মানে কি? তার মানে হলো, সালাত- এর সময় প্রার্থনারত মানুষ তার পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে কম সচেতন থাকেন এবং ধ্যানে  মশগুল থাকে।  তার মস্তিস্ক প্রশান্ত থাকে, তার হৃদস্পন্দন কম থাকে।  তার উদ্বেগ কম থাকে, তার রক্তচাপ কম থাকে। তার একাগ্রতা থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ রুকুরত এবং সিজদারাত অবস্থায় ইইজি-র আলফা রিলেটিভ পাওয়ার বেশি থাকে। 
(৪)
সালাতে মস্তিষ্কে প্রশান্তির সৃষ্টি হয়। পার্থিব দুশ্চিন্তা কমে যায়। ইইজিতে আলফা ওয়েভের বৃদ্ধি হয়। শরীরে প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিগন্যাল বৃদ্ধি পায়।  হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ কমে। দুশ্চিন্তা দূর হয়। শুধু তাই নয়, গবেষণায় দেখা গিয়েছে সিজদারত অবস্থায় হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ সালাতের মধ্যে সবচেয়ে কম থাকে। এই পরিবর্তনসমূহ স্ট্যাটিস্টিক্যালি সিগ্নিফিক্যান্ট। আপনারা জানেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় বিটা ব্লকার দেয়া হয় হৃদস্পন্দন (এবং কিছুটা রক্তচাপ) কমানোর জন্য যাতে হৃদপিণ্ডের উপর চাপ কম পড়ে এবং হৃদপিন্ড সুস্থ থাকে। সিজদা হলো বিটা ব্লকার!
*
শুধু সিজদারত থাকলেই আপনার হৃদপিন্ড প্রশান্ত হয়ে যাবে। 
কমে যাবে মানসিক যন্ত্রনা, মস্তিষ্কের উত্তেজনা। 
প্রশান্তিতে ভিজে যাবে আপনার অতৃপ্ত আত্মা। 
কমে যাবে রক্ত চাপ। অস্থিরতা। 
আর এর সব-ই হয় প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম দিয়ে। 
আর কি হয় প্যারাসিমপ্যাথেটিক-এ?
অশ্রুপাত! প্যারাসিমপ্যাথেটিক-এ চোখের জল। 
আপনার প্যারাসিমপ্যাথেটিক সিস্টেম কে একটিভেট করুন। 
অবসরে সিজদায় থাকুন, সিজদারত অবস্থায় অশ্রুপাতে থাকুন!
আপনার অনুশোচনার অশ্রুতে ভিজে যাক সুযুদের যমীন!
অনুশোচনার চোখের জলে ধুয়ে যাবে আপনার পাপ। 
পাপ ধুয়ে আপনি হবেন মুত্তাকীদের ঈমাম, ইনশাআল্লাহ। 
রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররি-ইয়্যাতিনা কুররাতা আয়ুনিওঁ-ওয়াজআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।
__________________________________
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বিজ্ঞানের কঠিন ভাষা বাংলায় লেখা যায় না। 
সাধারণের বোঝার সুবিধার্থে বৈজ্ঞানিক বিষয়ের অতি সরলীকরণ করা হয়েছে।