ক্রীড়া প্রতিবেদক:
অনেক প্রতীক্ষার বৃষ্টি জনজীবনে বুলিয়েছে স্বস্তির প্রলেপ। দেশবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসা প্রত্যাশার বৃষ্টিই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য হয়ে উঠেছে শঙ্কার কারণ। প্রশ্ন উঠেছে, আজ সিলেটে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি হবে তো? নাকি আশীর্বাদের বৃষ্টি বাগড়া দিয়ে ভাসিয়ে দেবে ম্যাচ?
প্রশ্নটা উঠছে, কারণ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আরো অনেক জেলার পাশাপাশি গতকাল নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টি হয়েছে ওয়ানডের ভেন্যু সিলেটেও। এই বৃষ্টি যদি আজও অব্যাহত থাকে এবং তাতে ম্যাচটা ভেস্তে যায়, সেটা হবে বাংলাদেশ দলের জন্য বড় একটা ক্ষতি। ধাক্কা লাগবে তামিম ইকবালের দলের সিরিজ জয়ের আশায়।
বৃষ্টিটা দুই দলের জন্যই শঙ্কার কারণ হতে পারত। কিন্তু প্রথম ম্যাচে যেভাবে আইরিশদের নাজেহাল করেছে তামিমের দল, তাতে সফরকারী আয়ারল্যান্ড বৃষ্টিতে আজকের ম্যাচটি ভেসে যাওয়াটাকে আশীর্বাদই মনে করবে! ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—প্রথম ম্যাচটিতে তিন বিভাগেই রাজত্ব করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। আইরিশদের নাকে-মুখের জল এক করে গড়েছে দুটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। ব্যাট হাতে বাংলাদেশ গড়ে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস (৩৩৮/৮)। পরে প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডকে মাত্র ১৫৫ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে জিতেছে ১৮৩ রানে। ওয়ানডে ক্রিকেটে রানের হিসাবে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়। এমন দাপুটে পারফরম্যান্সের পর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের লক্ষ্য আজ দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করা। কিন্তু এই আশার বেলুনেই শঙ্কার হুল ফোটাচ্ছে বৃষ্টি। আজকের ম্যাচ ভেস্তে গেলেও তামিমের দলের সামনে সিরিজ জয়ের সুযোগ থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দলকে আরেক বার ‘বাংলাওয়াশ’ করার স্বপ্নটা চুরমার হয়ে যাবে! তাই বাংলাদেশ দল খুব করে চাইবে বৃষ্টির বাধা এড়িয়ে ম্যাচটা হোক।
নিজেদের ঘরের মাঠে বাংলাদেশ টানা সাতটি ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়েছিল। সাকিব-তামিমদের সেই টানা সিরিজ জয়ের উৎসবে ইংল্যান্ড যতি বসিয়ে দিয়েছে ঠিক; তবে ইংলিশদের বিপক্ষে ১-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারের প্রতিশোধ সাকিবরা নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাদের হোয়াইটওয়াশ করে। তাছাড়া ওয়ানডে সিরিজ হারটাও ছিল লড়াই করে।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে হারের পর তৃতীয় ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ। এরপর ইংলিশদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিন ম্যাচেই জয়। জয়ের সেই ধারা ধরে রেখে প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ‘শিশু’ বানিয়ে ছেড়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের দুরন্ত পারফরম্যান্সই আজ তামিমের দলে সিরিজ জয়ের নেশা চাপিয়ে দিয়েছে! আশাটা পূর্ণ হলে উন্মুক্ত হবে হোয়াইটওয়াশ করার পথও! কিন্তু আশার এসব রঙিন ছবি আঁকতে বসে অজান্তেই বেজে উঠছে বৃষ্টির শঙ্কা।
ভাবনার অন্দরে ঐ বৃষ্টি শঙ্কার পাশাপাশি মাথা ঘামাতে হচ্ছে আয়ারল্যান্ডকে নিয়েও। ম্যাচটা আজ হলে আইরিশরা নিশ্চয় মরণ কামড়ই বসাতে চাইবে। প্রথম ম্যাচের ১৮৩ রানের লজ্জার হার তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। তারা নিশ্চিতভাবেই আজ ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে। তারা সামর্থ্যের চেয়েও বেশি কিছু করার চেষ্টা করবে। তামিম-সাকিবেরাও বিষয়টা জানেন।
মাঝখানে মাত্র এক দিনের বিরতি ছিল। তাই গতকাল বাংলাদেশ দল দলীয়ভাবে অনুশীলন করেনি। প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ অধিনায়ক তামিম ইকবাল শুধু খানিকটা সময় ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। তার একাকী অনুশীলনের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কারই—যে কোনো মূল্যে রানে ফিরতে মরিয়া তামিম।
চোখে আঘাত পাওয়ায় প্রথম ম্যাচটি খেলতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। আজও তার একাদশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছেই। তিনি ফিরলে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আসবে। তিনি না ফিরলেও পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ, মিরাজ সুস্থ না হলে শুধু শুধু টিম ম্যানেজমেন্ট দলের জয়ী কম্বিনেশন ভাঙতে চাইবে না! তবে একাদশ যেমনই হোক, তামিমের দলের লক্ষ্য একটাই—জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করা।
প্রথম ম্যাচে দলের রেকর্ড গড়া জয়ের নায়ক অনেকেই। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সাকিব আল হাসান। ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ করেই তিনি ছুটে যান দুবাইয়ে। সেখানে পুলিশ হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করে বিতর্কের জন্ম দেন। তবে সেই বিতর্ক মাথায় নিয়েই প্রথম ম্যাচে দলকে জিতিয়েছেন ব্যাট-বলের দুরন্ত পারফরম্যান্সে। মজার ব্যাপার হলো, প্রথম ম্যাচ জয়ের পর গতকালও সাকিব সিলেট থেকে উড়ে আসেন রাজধানী ঢাকায়। তবে গতকাল তিনি ঢাকায় এসেছিলেন গ্রাজুয়েশন সনদ গ্রহণ করতে! মাঠের ক্রিকেট ব্যস্ততা এবং মাঠের বাইরের ব্যবসা ও বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি) থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে গ্রাজুয়েশন সমাপ্ত করেছেন। তারই সনদ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন। সনদ নিয়েই আবার ফিরে গেছেন সিলেটে। এই আনন্দে আজ নিশ্চয় আরেকবার সাকিবঝলক দেখা যাবে। বিতর্কের হোক বা আনন্দের, যে কোনো উপলক্ষ্যই যে সাকিব ব্যাট-বলের রঙে রাঙাতে পারেন, সেটি তো প্রমাণিতই!
এমআই